আরএমজি (তৈরি পোশাক) খাতের পাশাপাশি নন-আরএমজি (তৈরি পোশাকের উৎপাদনে জড়িত নয় এমন প্রতিষ্ঠান) খাতের রপ্তানিকারকরাও বিশেষ করে যাদের বন্ড লাইসেন্স আছে সময়মতো ডেলিভারি নিশ্চিত করতে ও রপ্তানি আদেশ (এক্সপোর্ট অর্ডার) বাড়াতে এখন অন্য কারখানার মাধ্যমে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করতে পারবেন।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত এক আদেশ জারির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। একইসঙ্গে, সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ের শর্তও শিথিল করেছে রাজস্ব কর্তৃপক্ষ। যেমন শুল্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আইনি বিরোধে জড়িত সাব-কন্ট্রাক্টিং কারখানাগুলো এখন ব্যাংক গ্যারান্টির পরিবর্তে কেবল আন্ডারটেকিং অথবা ইন্ডেনচার বা চুক্তিপত্রের মাধ্যমেই অর্ডার নিয়ে কাজ করতে পারবে। এর আগে, আইনি বিরোধের ক্ষেত্রে সাব-কন্ট্রাক্টিং কারখানার মালিকদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হতো।
এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, ২০২১ সাল থেকে রপ্তানিমুখী সংস্থাগুলোর জন্য সাব-কন্ট্রাক্টিং প্রভিশন বা সুবিধা চালু করা হয়। তবে গেল জুনে ২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে এই সুবিধা শুধুমাত্র আরএমজি খাতের জন্য বহাল রেখে, বাকি সুবিধাভোগী খাতগুলোর জন্য প্রত্যাহার করা হয়। ফলে সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ের অনুমতি না থাকায় নন-আরএমজি সেক্টর, বিশেষ করে চামড়া রপ্তানিকারকরা, বিদেশি অর্ডার তেমন পাচ্ছিলেন না। এতে করে যেসব কারখানা কেবল সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ের ওপরেই নির্ভরশীল ছিল, যেসব কারখানা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সম্প্রতি এনবিআরকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়। যার ফলশ্রম্নতিতে রাজস্ব কর্তৃপক্ষ তাদেরকে আরএমজি সেক্টরের মতো একইরকম সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ে যুক্ত হয়ে কাজ করার সুবিধা দিয়েছে।
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক উৎপাদনের ক্ষেত্রে সাব-কন্ট্রাক্টিং বিষয়টি ব্যাপকভাবে পরিচিত। বিদেশি বায়ারের কাছ থেকে অর্ডার নেয়ার পর, তার ওই পরিমাণ কাজের সক্ষমতা না থাকলে, কিংবা বায়ারের পণ্য দ্রম্নত ডেলিভারি দেওয়ার প্রয়োজন হলে অন্য প্রতিষ্ঠানে তিনি ওই অর্ডারের পুরো কিংবা অংশবিশেষ কাজ করিয়ে নিতে পারেন, যা সাব-কন্ট্রাক্ট নামে পরিচিত।
তবে সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ের ক্ষেত্রে মূল চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই বায়ারের (ক্রেতা) অনুমতি নিতে হবে। কারণ বিদেশি বায়াররা সব সময় সাব-কন্ট্রাক্টিং কারখানাতেও একই ধরনের কমপস্নায়েন্স নিশ্চিত করতে চান।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশেরও বেশি আসে তৈরি পোশাক বা আরএমজি খাত থেকে। বাকি অংশ আসে নন-আরএমজি খাত, যেমন্ত চামড়া, জুতা, পস্নাস্টিক এবং অন্যান্য শিল্পখাত থেকে। এদিকে, নন-আরএমজি খাতের প্রতিনিধিরা এনবিআরের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ছেন। তাদের আশা, এই পদক্ষেপ বিদেশি অর্ডার বাড়াতে সহায়তা করবে।
দেশের অন্যতম বিখ্যাত চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিকারক বেঙ্গল শু ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিপু সুলতান বলেন, 'এই সিদ্ধান্ত আমাদের আরও অর্ডার সুরক্ষিত করতে এবং ক্ষতি কমাতে সাহায্য করবে'।
তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ে ডেলিভারি নিশ্চিত করতে ও কাজের চাপ কমাতে অনেক সময় আমাদের অন্য কারখানাতেও কিছু কাজ স্থানান্তর করতে হয়। এ ছাড়া, আমাদের অর্ডার যখন কম থাকে, তখন আমরা নিজেরাও সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ে যুক্ত হয়ে কাজ করতে চাই।
পিকার্ড বাংলাদেশ লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক অমৃতা মাকিন ইসলাম বলেন, 'নন-আরএমজি খাতের জন্য সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ের অনুমতি দেওয়া একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ; এটি আমাদের রপ্তানি বাড়াতে সাহায্য করবে।'