সংকটে থাকা পাঁচটি ব্যাংককে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে তারল্য সুবিধা পেতে গ্যারান্টি দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাঁচটি ব্যাংককে গ্যারান্টি দিতে চুক্তি সই করেছে।
তারল্য সংকটে থাকা কোনো ব্যাংক অপর ব্যাংক থেকে তারল্য সুবিধা পেলে সে অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে গ্যারান্টির প্রস্তাব চাইবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে গ্যারান্টি সুবিধা দেবে।
এখন পর্যন্ত সংকটে থাকা সাতটি ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি তারল্য সহায়তা পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে গ্যারান্টি চেয়ে আবেদন করেছে।
প্রাথমিকভাবে পাঁচ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিপত্রে সই করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো- ন্যাশনাল ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গেস্নাবাল ইসলামী ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, যেসব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, তারা এখন আন্তঃব্যাংক বাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করে বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে গ্যারান্টির জন্য পাঠাবে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্যারান্টির আওতায় কোন ব্যাংক কত টাকা নিতে পারবে, তা বিবেচনা করে অনুমতি দেবে।
এর আগে সাতটি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিশেষ ধার চেয়ে আবেদন করে। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ৫ হাজার কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংক ৪ হাজার কোটি টাকা, গেস্নাবাল ইসলামী ব্যাংক ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ২ হাজার কোটি টাকা এবং ইউনিয়ন ব্যাংক ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা তারল্য সহায়তার গ্যারান্টি চেয়েছে।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পর ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়। ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে এস আলমের মালিকানাধীন বেশকিছু ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় আমনতকারীরা তারল্য তুলে নিতে থাকে। যার কারণে গত প্রায় দেড় বছর ধরে এই ব্যাংকগুলো তীব্র তারল্য সংকটে রয়েছে। এর মধ্য কয়েকটি ব্যাংক ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) ও স্ট্যাচু্যটরি লিকুইডিটি রেশিও (এসএলআর) রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে।
পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কিছু ব্যাংকের চলতি হিসাবেও ঘাটতি তৈরি হয়েছিল। ব্যালান্স ঋণাত্মক হলেও ব্যাংকগুলোকে লেনদেন অব্যাহত রাখার সুযোগ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তবে টাকা ছাপিয়ে দেওয়া সেই বিশেষ সুবিধা এখন বন্ধ করে দিয়েছেন নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
এ অবস্থায় সাময়িক সংকট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে ধারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর দুর্বল ব্যাংকের কাছ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিমান্ড প্রমিসরি (ডিপি) নোট নিয়ে রাখবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক বলেন, কোনো ব্যাংক সংকটে পড়লে সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ ধার দেওয়া হয়। এখন সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধার দিলে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়বে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি টাকা না দিয়ে অন্য ব্যাংক থেকে ধারের ব্যবস্থা করছে।
এ পদ্ধতিতে বাজারের টাকা এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে যাবে। ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি প্রভাব পড়বে না। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির মানে হলো, কোনো কারণে এসব ব্যাংক ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই টাকা দেবে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের মতো টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দেবে না। তবে ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক মুদ্রা সরবরাহের মাধ্যমে এ সহায়তা নিতে পারে।'