শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির সুবিধা জাহাজ ও ড্রেজার নির্মাণ শিল্পে
প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অর্থ-বাণিজ্য রিপোর্ট
শুল্কমুক্ত ওয়্যারহাউজ সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করতে পারবে জাহাজ ও ড্রেজার নির্মাণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ও বৈদেশিক মুদ্রায় মূল্য পরিশোধযোগ্য স্থানীয় সরবরাহ আদেশের বিপরীতে এ সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে এ সুবিধার আওতায় এমএস রডসহ নয়টি পণ্য আমদানি করা যাবে না। জাতীয় রাজস্ব বোডের (এনবিআর) কাস্টমস রপ্তানি ও বন্ড শাখার এক অফিস আদেশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দ্বিতীয় সচিব এইচএম আহসানুল কবীর স্বাক্ষরিত অফিস আদেশটি ১২ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হয়েছে। একই বিষয়ে ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল জারি করা স্থায়ী আদেশটি বাতিল করা হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, এ সুবিধার আওতায় এমএস রড বা বার, অ্যাঙ্গেল, এমএস ওয়্যার, প্রিফ্যাব্রিকেটেড বিল্ডিং (দালানকোঠার অবকাঠামো), সব ধরনের সিমেন্ট, সব ধরনের কেবল, পেইন্ট, লুব অয়েলসহ সব ধরনের জ্বালানি তেল, সব ধরনের অফিস সরঞ্জাম, আসবাব, এয়ারকন্ডিশনার এবং গৃহস্থালি সামগ্রী আমদানি করা যাবে না।
এ প্রসঙ্গে এনবিআরের সাবেক সদস্য (কাস্টমস ও ভ্যাট) ফরিদ উদ্দিন বলেন, 'পোশাক শিল্প মালিকরা যেমন বিনা শুল্কে রপ্তানির বিপরীতে কাঁচামাল আমদানি করে থাকেন, সেই ধরনেরই একটি সুবিধা জাহাজ ও ড্রেজার নির্মাণকারীদের জন্য ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর। তারা যদি আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ নিয়ে জাহাজ ও ড্রেজার নির্মাণ ও রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে নিয়ে আসেন, তাহলে তারা কাঁচামাল আনার ক্ষেত্রে এ সুবিধা পাবেন।'
আদেশটিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক দরপত্র আবশ্যিকভাবে 'পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬' এবং 'পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮'-এর প্রযোজ্য শর্তাদি পূরণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক দরপত্রে কার্যাদেশপ্রাপ্ত বন্ডেড প্রতিষ্ঠানকে আবশ্যিকভাবে নিজ নামে কাঁচামাল আমদানি করতে হবে এবং নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (নোয়া), চুক্তিপত্রের কপি এবং আন্তর্জাতিক দরপত্রের প্রমাণ আমদানি পর্যায়ে দাখিল করতে হবে। ওয়্যারহাউজ লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আন্তর্জাতিক দরপত্রের সরবরাহের লক্ষ্যে পণ্য উৎপাদনের জন্য যেসব কাঁচামাল লাগবে তা শুল্ক রপ্তানি ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তর (ডেডো) বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নেভাল আর্কিটেক্ট অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের বিশেষজ্ঞ দলের কাছ থেকে সেসব কাঁচামালের তালিকা সংগ্রহ করতে হবে এবং তালিকায় নেই এমন কোনো কাঁচামাল (পণ্য) শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধাপ্রাপ্ত হবে না।
নির্মিতব্য জাহাজের কাঁচামালের যথাযথ বর্ণনা ও স্পেসিফিকেশনসহ প্রাসঙ্গিক তথ্যের বিষয়ে আমদানিকারক বা বন্ডার ইন্টারন্যাশনাল ক্ল্যাসিফিকেশন সোসাইটির সনদ সংগ্রহ করে শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করতে বাধ্য থাকবে। কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর এ আদেশের আওতায় বন্ডেড সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির আগে কার্যাদেশের বিপরীতে সরবরাহের উদ্দেশ্যে তালিকা (অপচয়সহ) ও যৌক্তিক পরিমাণ সম্পর্কিত তথ্যাদি পরিশিষ্ট-১ অনুযায়ী কমিশনার অব কাস্টমস (বন্ড) বা এনবিআর থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কমিশনার বরাবর দাখিল করতে হবে। কমিশনার প্রয়োজনীয় পরীক্ষাপূর্বক যথার্থতা প্রাপ্তি সাপেক্ষে ওই সহগ অনুমোদনপূর্বক প্রতিস্বাক্ষর করবেন। প্রতিটি আমদানি পণ্য চালান শুল্কায়নকালে কমিশনার কর্তৃক অনুমোদিত পরিশিষ্ট-১-এর সত্যায়িত অনুলিপি আমদানি দলিলাদির সঙ্গে দাখিল করতে হবে। কাঁচামালের তালিকা যাচাইকালে যথার্থতা প্রাপ্তি সাপেক্ষে কমিশনার অব কাস্টমস (বন্ড) বা এনবিআর থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কমিশনার অনুমোদন ও প্রতিস্বাক্ষর করবেন। তবে কমিশনারের কাছে আবশ্যক বিবেচিত হলে তিনি তা পুনরায় যাচাইকরণের উদ্দেশ্যে শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তর অথবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাবেন। এ-সংক্রান্ত সব খরচ বন্ডার বহন করবে এবং ওইরূপ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কমিশনার ওই তালিকা অনুমোদন করবেন।
প্রতিটি কার্যাদেশের বিপরীতে প্রত্যায়িত ও আমদানিকৃত কাঁচামাল এবং সরঞ্জামাদি বন্ড রেজিস্টারে এন্ট্রি করে জাহাজ অথবা ড্রেজার নির্মাণের পর একটি নির্দিষ্ট হাল নম্বরের বিপরীতে যে পরিমাণ কাঁচামাল জাহাজ অথবা ড্রেজার নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে, জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে তার বিস্তারিত ঘোষণা সংশ্লিষ্ট কমিশনার অব কাস্টমস (বন্ড) বা এনবিআর থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কমিশনারের কাছে দাখিল করতে হবে।
জাহাজ বা ড্রেজার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান জাহাজ বা ড্রেজার নির্মাণের পর তা সরবরাহের অন্তত ৩০ দিন আগে জাহাজ নির্মাণ সম্পন্নের ঘোষণা দিয়ে জাহাজ নির্মাণ সম্পন্নের সনদের জন্য মনোনীত অথবা এর আওতায় পরিচালিত সংস্থা এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবেদন করবে।