অব্যাহত দরপতনের মধ্যে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজার। প্রায় প্রতিদিনই লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পালস্না ভারি হচ্ছে। এতে শেয়ারবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের হতাশা বেড়েই চলেছে।
আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার থেকে বেশি। এতে কমেছে মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় রয়েছে বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে কমেছে মূল্যসূচক। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া দুই কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো। আর শেষ ১১ কার্যদিবসের মধ্যে ৮ কার্যদিবসেই পতনের মধ্যে থাকল শেয়ারবাজার।
বাজারের এই চিত্র সম্পর্কে বিনিয়োগকারী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রতিদিন আশায় থাকি বাজার ভালো হবে। কিন্তু প্রতিদিনই বাজারে দরপতন হচ্ছে। আর আমাদের লোকসানের পালস্না ভারি হচ্ছে। এরই মধ্যে বিনিয়োগ করা পুঁজির প্রায় অর্ধেক নাই হয়ে গেছে। কবে এই লোকসান থেকে বের হবো সেই টেনশনে ঠিকমত ঘুমাতে পারি না।
তিনি বলেন, সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল এবার হয়তো লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারব। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি। গত সরকারের মতো এই সরকারের আমলেও শেয়ারবাজার সেই পতনের মধ্যেই রয়েছে। আর আমার মতো সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লোকসান গুনেই চলেছি।
আরেক বিনিয়োগকারী মিজানুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজার ভালো হবে এই আশায় আছি। কিন্তু বাজার তো ভালো হচ্ছে না। কবে বাজার ভালো হবে তাও বুঝতে পারছি না। দিন যত যাচ্ছে বাজার নিয়ে হতাশা তত বাড়ছে। মাঝেমধ্যে মনে হয় লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়ে চলে যাব। কিন্তু এত লোকসানে শেয়ার বিক্রি কীভাবে করব। ছয় লাখ টাকার শেয়ার কিনে আড়াই লাখ টাকা লোকসানে রয়েছি।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টা বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকে। ফলে সূচকও ঊর্ধ্বমুখী থাকে। কিন্তু দুপুর ১২টার পর বাজারের চিত্র বদলে যায়। দাম বাড়ার তালিকা থেকে বেশি কিছু প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। এতে সূচকও ঋণাত্মক হয়ে পড়ে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ১৫৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৬৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬৮১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৩৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৬ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৬৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবক'টি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬৩৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬৬৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৩৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে সোনালি আঁশের শেয়ার। কোম্পানিটির ২১ কোটি ৮৬ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লিন্ডে বাংলাদেশের ১৯ কোটি ৬৫ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, ওরিয়ন ইনফিউশন, এনআরবি ব্যাংক, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, অগ্নি সিস্টেম, বিচ হ্যাচারি এবং গ্রামীণফোন।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৪১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২২৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৪টির এবং ৩০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।