বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সেবা ব্যাহত

প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণের জন্য ১৯৯০ সালে একটি তহবিল গঠন করা হয়

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য রিপোর্ট
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে বইছে সংস্কারের হাওয়া। তবে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা সরকারের অনেক মন্ত্রণালয় অধিদপ্তরে পছন্দের কর্মকর্তারা এখনো চেয়ার আকড়ে ধরে আছেন। আর এসব ব্যক্তির ছত্রছায়ায় এখনো সরকারি নানা কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা নীরবে ঘটছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রবাসীদের কল্যাণমূলক সেবাদানকারী একমাত্র সরকারি সংস্থা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সেবা কুক্ষিগত করার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের একটি কুচক্রী মহল। অভিযোগ রয়েছে, স্বৈরাচার সরকারের চিহ্নিত সুবিধাভোগীদের অন্যতম জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ বু্যরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক (গ্রেড-১) ও প্রবাসী কল্যাণসহ বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে মন্ত্রণালয়ে ঘাঁপটি মেরে থাকা একটি সুবিধাবাদী চক্র আইন ও বিধিকে তোয়াক্কা না করে এই চক্রান্তের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাকে অনেকটা অন্ধকারে রেখেই এসব কাজ করা হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে এসব কাজ শুরু হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। কেউ কেউ ক্ষুব্ধও। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক হামিদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ বু্যরোর মহাপরিচালক কৌশলে সরকারি দুটি প্রতিষ্ঠানের (বিএমইটি ও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড) কার্যক্রম একীভূত করার নামে বিভিন্নভাবে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন বলে আমরা মনে করছি। তারা বলেন, আমাদের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে তারা সঠিক তথ্য না দিয়ে কল্যাণ বোর্ডের কাজকে সংকুচিত করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে। আমরা আইন-বহির্ভূত কার্যক্রম যাতে না হতে পারে সে ব্যাপারে উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কারণ আমাদের দপ্তর থেকে প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণমূলক সেবা দেওয়া হয়। বৈষাম্যবিরোধী আন্দলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের কার্যক্রম স্বচ্ছতা ও গতিশীল করার লক্ষ্যে সেখানে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে উপ-পরিচালক পদায়ন করা হয়েছে। তিন শিফটে তিনজন সহকারী পরিচালক পদায়ন করে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হয়েছে। পূর্বের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বৈরাচার সরকারের আজ্ঞাবহ ও একটি দেশের এজেন্ট হওয়ার কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিএমইটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে একজন উপ-পরিচালক ও ২ জন সহকারী পরিচালক পদায়ন করানো হয়েছে, যা প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে একজন কর্মচারীকে তিন বছরের জন্য প্রদান করা হয়। কিন্তু বর্তমানে অনেক কর্মচারী ৮ থেকে ১০ বছর কর্মরত রয়েছেন। সেক্ষেত্রে তাদের সেবায় অনীহা বা স্বেচ্ছাচারিতার মাত্রা অনেক বেড়ে গিয়েছে। উভয় প্রতিষ্ঠান হতে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে একজন উপ-পরিচালক এবং প্রতি শিফটে একজন করে সহকারী পরিচালক পদায়ন করার দাবি উঠেছে। এতে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে সেবার মান বৃদ্ধি পাবে এবং কাজের গতিশীলতা বাড়বে। প্রবাসী কর্মীরা প্রকৃত সেবা পাবেন। প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণের জন্য ১৯৯০ সালে একটি তহবিল গঠন করা হয়। এরপর ২০০১ সালে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় গঠিত হলে ২০০২ সালে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল বিধিমালা জারি এবং ২০১৮ সালের আইনের মাধ্যমে স্বাধীন-সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে 'ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড' গঠন করে প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বহুমুখী সেবা দেওয়া হচ্ছে। সেই থেকে একের পর এক নতুন নতুন সেবা দিয়ে যাচ্ছে সরকারি এই সংস্থাটি। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড কর্তৃক তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রচলিত প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক কর্মীদের বিদেশ গমন ও আগামনের সময় সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকে। ডেস্কের ভাড়াসহ সব খরচ বহন করে আসছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের আন্ডারে মোট ছয়টি ডেস্ক রয়েছে। প্রধান ডেস্ক, ইমিগ্রেশন এক ডেস্ক, ইমিগ্রেশন দুই ডেস্ক, ইমিগ্রেশন তিন ডেস্ক, আগামী ডেস্ক ও কার্গো ডেস্ক। প্রধান ডেস্কে বিদেশগামী কর্মীদের ফরম পূরণ ও বোর্ডিং কার্ড পাওয়ার সহায়তা করে থাকে। সৌদি থেকে ছুটিতে আসা কর্মীদের ছুটির কাগজ সত্যায়ন করে থাকে। দাপ্তরিক আনুষঙ্গিক কাজ করা হয় প্রধান ডেস্ক থেকে। ইমিগ্রেশনের ভিতরে ইমিগ্রেশন ১,২,৩নং ডেস্কে বিদেশগামী কর্মীদের ম্যানপাওয়ার ছাড়পত্র যাচাই করা হয়। বিদেশে ম্যানপাওয়ার ছাড়পত্র ছাড়া গমন করলে বিভিন্নভাবে বিদেশে কর্মীদের ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়। ফলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডকে ওইসব অবৈধ কর্মীদের নিয়ে বিদেশে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আগামনী ডেস্কে বিদেশ থেকে ফেরত অসহায় ও দুস্থ কর্মীদের আর্থিক সহায়তা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া আগমনী ডেস্ক অসুস্থ রোগীদের রিসিভ করে কল্যাণ বোর্ডের অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে হাসপাতালে ভর্তি অথবা তাদের স্বজনের কাছে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। কার্গো ডেস্কের মাধ্যমে প্রবাসে মৃত কর্মীর ওয়ারিশদের কাছে লাশ হস্তান্তর ও লাশ পরিবহণ ও দাফন খরচ বাবদ নগদ ৩৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। স্বল্প ভাড়ায় কল্যাণ বোর্ডের অ্যাম্বুলেন্স প্রবাসীদের মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।