সুকৌশলে ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ
মিউচুয়াল ফান্ডের ৭০০ কোটি টাকা কারসাজি
পুঁজিবাজারের মিউচুয়াল ফান্ড খাতের উন্নয়নে এ ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকান্ড রোধ করতে বিএসইসিকে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টরা
প্রকাশ | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
পুঁজিবাজারের শীর্ষ সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হাসান ইমামের বিরুদ্ধে ৭০০ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। গত পাঁচ বছরে রেস পরিচালিত মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবহার করে তার নিজস্ব কোম্পানি, সংস্থা, তহবিলের সুবিধার্থে আইন বহির্ভূত এসব লেনদেন করেছেন। এতে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।
অভিযোগ উঠেছে, রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এবং তাদের পরিচালিত মিউচুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি একই ব্যক্তির নির্দেশনায় পরিচালিত হচ্ছে। যোগসাজসের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ পাচার ও ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে এমন পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ রেস ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হাসান ইমাম। তাকে এ কাজে সহযোগিতা করছেন তারই প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন কোম্পানির শীর্ষ পদে থাকে তিন ব্যক্তি। ওই তিন ব্যক্তিই আবার রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান বিজিআইসির মনোনীত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ধরনের কর্মকান্ড সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, হাসান ইমামের নিয়ন্ত্রণাধীন কোম্পানি তিনটি হলো- ডাটাসফট সিস্টেমস বাংলাদেশ লিমিটেড, ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট স্টেপস লিমিটেড ও একাশিয়া শ্রিম লিমিটেড। এছাড়া বাংলাদেশ রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠানকেও হাসান ইমাম সুপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। বিশেষ করে বিজিআইসির পরিচালনা পর্ষদে মনোনীত পরিচালক হিসেবে এমন তিনজন ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করছেন, হাসান ইমামের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির শীর্ষ পদে রয়েছেন। ওই তিন ব্যক্তি হলেন- অরুণাংশু দত্ত, মোহাম্মদ মুনজুর মাহমুদ ও কায়সার ইসলাম।
এর মধ্যে অরুণাংশু দত্ত একাশিয়া শ্রিম লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), মোহাম্মদ মুনজুর মাহমুদ ডাটাসফট সিস্টেমস বাংলাদেশ লিমিটেড ঢাকার প্রেসিডেন্ট ও কায়সার ইসলাম ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট স্টেপস লিমিটেড ঢাকার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর এই তিনটি কোম্পানির মালিকানায় প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে রয়েছেন হাসান ইমাম। পুঁজিবাজার থেকে বিশেষ সুবিধা নিতেই সুপরিকল্পিতভাবে রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ও ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন হাসান ইমাম। আর তার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করছেন অরুণাংশু দত্ত, মোহাম্মদ মুনজুর মাহমুদ ও কায়সার ইসলাম।
বিএসইসির মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালায় এ ধরনের কর্মকান্ডের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা সুপরিকল্পিতভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তাই পুঁজিবাজারের মিউচুয়াল ফান্ড খাতের উন্নয়নে এ ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকান্ড রোধ করতে বিএসইসিকে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টরা।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচুয়াল ফান্ড) বিধিমালা, ২০০১ এর বিধি ১৯(১)(ঘ) উলেস্নখ রয়েছে- 'নিবন্ধন মঞ্জুরির জন্য অযোগ্যতা- কোন কোম্পানি, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা ট্রাস্টি হিসাবে নিবন্ধন মঞ্জুরির জন্য যোগ্য হইবে না যদি- উহা বা উহার কোন পরিচালক কোন মিউচুয়াল ফান্ডের উদ্যোক্তা বা সম্পদ ব্যবস্থাপক, স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার হন বা উহার বা উহাদের অধীনস্থ কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের কোন পরিচালক হন বা উহার সহিত কোনভাবে সম্পর্কিত হন।'
এদিকে দীর্ঘদিন ধরেই দেশের মিউচুয়াল ফান্ড খাত বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারছে না। সুশাসন ও স্বচ্ছতার ঘাটতি থাকায় খাতটির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে।
সম্প্রতি এক সম্পদ ব্যবস্থাপক অর্থ আত্মসাৎ করে দুবাইয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আবারো সামনে এসেছে এ খাতের দুর্দশার চিত্র। এ অবস্থায় মিউচুয়াল ফান্ড খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি বাংলাদেশ রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টর কার্যক্রম পরিদর্শনের মাধ্যমে সম্পদ যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয় বিএসইসি।
এ বিষয়ে বিজিআইসির কোম্পানি সচিব সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, 'রেস ম্যানেজমেন্টের সিইওর সঙ্গে তিনজন পরিচালকের যে সম্পর্ক রয়েছে সেটি তারা গোপন করেছিল। তাই এ বিষয়ে বিজিআইসির কিছু করণীয় ছিল না। যেহেতু ফান্ডগুলোর অর্থ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় আমরা ট্রাস্ট্রি থেকে অব্যাহতি নিব। এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত হয়েছে।'