গেল ১৫ বছর একের পর এক অনিয়মে ভঙ্গুর ব্যাংক ও আর্থিক খাত। বিশ্লেষকরা বলছেন, সব অনিয়মই হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায়, যাতে আরও দুর্বল হয়েছে এই খাত। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন, এই খাতে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে।
সর্বশেষ ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে লাগামহীন। বিশ্লেষকদের মতে, এই খাত দুর্বল হওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা বলছেন, সাবেক আমলা ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নরের দায়িত্ব পাওয়ার পর ব্যাংক খাতের অবস্থা আরও ভঙ্গুর হয়েছে।
বিশেষ ব্যবস্থায় ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ, সুদহারের সীমা বেঁধে দেওয়া, সিআরআর সংরক্ষণের হার কমানো, ব্যাংকে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মতো স্পর্শকাতর সিদ্ধান্তু নেওয়া হয় বিভিন্ন গোষ্ঠীর দাবির প্রেক্ষিতে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে হয়েছে নানা কারসাজি ও পাচারের মতো ঘটনা। ঋণ শোধ না করেও কাগজ-কলমে খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ পেয়েছেন কিছু ব্যবসায়ী।
বিআইবিএম এর সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু দায়ী নয়, উৎসাহিত করেছে। এসব ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন ছিল। হস্তক্ষেপ করতে পারে- এমন উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল।'
আর্থিক খাত বিশ্লেষক মামুন রশীদ বলেন, 'অভ্যন্তরীণ সুশাসন কিংবা নিরীক্ষকদের কাজ, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরীক্ষণ, টাকা কোথায় গেল, টাকা কীভাবে ব্যবহার হলো এবং এত টাকা প্রয়োজন ছিল কিনা?'
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর, সম্প্রতি নতুন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি জানান, ভবিষ্যতে কেউ যাতে অনিয়ম করতে না পারে, সে জন্য সংস্কার করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, 'সংস্কারের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও সংস্কার প্রয়োজন। দায়বদ্ধতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবশ্যই আছে। এটা থাকতেই হবে। সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যর্থতা অবশ্যই হয়েছে।'
বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংক খাতে সংস্কার হতে হবে টেকসই ও জনবান্ধব। একইসঙ্গে অনিয়ম ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের তাগিদ দেন তারা।