ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বব্যাপী তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছেছিল। কিন্তু ইউরোপের দেশগুলোয় এলএনজি উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে সরবরাহ বেড়েছে। ফলে বাজারে বিদ্যমান দামের ওঠানামা আগের তুলনায় কিছুটা কমে এসেছে। তবে এখনো বিশ্বব্যাপী এলএনজির বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে বলে মনে করছেন এসঅ্যান্ডপি গেস্নাবাল কমোডিটি ইনসাইটসের ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা।
তাদের ভাষ্যমতে, জলপথে পরিবহণ করা কার্গোর তথ্য ও সরবরাহ ঝুঁকির উদ্বেগ এলএনজির বাজার এখনো অস্থিতিশীল করে রেখেছে। বিশ্লেষকরা জানান, বিশ্ববাজারে চলতি বছরের শীতকাল থেকে আগামী বছরের শুরু পর্যন্ত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা বজায় থাকতে পারে। ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা ও ভূরাজনৈতিক ঝুঁকির কারণে সরবরাহ উদ্বেগে এলএনজির দাম বাড়ছে।
ইউরোপে এসঅ্যান্ডপি গেস্নাবাল কমোডিটি ইনসাইটস গত ২৯ আগস্ট অক্টোবরে সরবরাহ চুক্তিতে নর্থওয়েস্ট ইউরোপ এলএনজি মার্কার বাজার আদর্শের দাম স্থির করেছে প্রতি এমএমবিটিইউ ১২ ডলার ৪৩৮ সেন্ট। এছাড়া পূর্ব এশিয়ায় সরবরাহের জন্য এলএনজির মূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতি এমএমবিটিইউ ১৪ ডলার ৪৪ সেন্ট। যদিও নর্থওয়েস্ট ইউরোপীয় দাম ২০২২ সালের ২৬ আগস্টের প্রতি এমএমবিটিইউ ৭৪ ডলার ৪৮ সেন্টের রেকর্ড উচ্চতা থেকে হ্রাস পেয়েছে। তারা আরো জানান, বর্তমানে বেশকিছু উপাদান মূল্যের পরিবর্তনকে বেশি প্রভাবিত করছে। বিশ্বের জলপথে পরিবহণ করা এলএনজির বাজার থেকে বোঝা যাচ্ছে শীতকালে দাম আরো বাড়তে পারে।
এসঅ্যান্ডপি গেস্নাবাল কমোডিটি ইনসাইটসের ইউরোপীয় ও রুশ এলএনজির সিনিয়র রিসার্চ অ্যানালিস্ট আলিজা বাজরামোভিচ বলেন, '?আমি মনে করি, বর্তমান এলএনজি বাজারের ভারসাম্য খুবই ভঙ্গুর আর তা শীতকালে অব্যাহত থাকবে। এশীয় ক্রেতারা এখনো তাদের মজুত পূর্ণ করতে শুরু করেনি। এ অঞ্চলে তাপমাত্রা এখনো বেশি। মিসর ইউরোপ থেকে উলেস্নখযোগ্য পরিমাণ আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। এদিকে দক্ষিণ আমেরিকা চতুর্থ প্রান্তিক ও আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে কিছু অতিরিক্ত কার্গো নিতে পারে। অন্যদিকে ফ্রান্স পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের দিকে বেশি ঝুঁকছে, বিদু্যৎ উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদাও কমেছে। এসব কারণে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে এলএনজির বাজার। ফলে দামের ওঠানামা খুব বেশি মাত্রায় দেখা দিতে পারে।'
এদিকে ইউক্রেন দিয়ে ইউরোপের দেশগুলোয় রাশিয়ার এলএনজি সরবরাহ করার চুক্তির মেয়াদ আগামী বছর শেষ হতে পারে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাশিয়া থেকে সরবরাহ কমে গেলে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম আরো বাড়বে।
ইউরোপের দেশগুলোয় গত ২৮ আগস্ট পর্যন্ত প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত ৯১ দশমিক ৯৮ শতাংশ পূর্ণ ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নির্ধারিত সময়সীমা ১ নভেম্বরের আগেই গত ১৯ আগস্ট তার ৯০ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ করেছে। এর পরও সরবরাহ উদ্বেগে এলএনজির বাজার অস্থিতিশীল থাকতে পারে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে আলজেরিয়া ও নরওয়ে থেকে আসা গ্যাস সরবরাহের অস্পষ্টতা ও লিবিয়া থেকে গ্যাস পাইপলাইনের রক্ষণাবেক্ষণে দেরি বাজারকে আরো অস্থির করতে পারে।