শেয়ারবাজারে বিগত সময় একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও দোষীদের শাস্তি দেওয়া হয়নি। এমনকি রাজনৈতিক চাপে সঠিক তদন্ত পর্যন্ত করেনি। কিন্তু এই কমিশন তদন্তপূর্বক প্রকৃত দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করবে। সোমবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ এ কথা বলেন। এ সময় বিএসইসির অন্যান্য কমিশনার ও তদন্ত কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, অতীতের তদন্ত প্রতিবেদনগুলো প্রকাশিত না হলেও এবার আমরা প্রকাশ করব। পাশাপাশি তদন্ত কমিটির মধ্যে যদি কেউ স্বার্থসংশ্লিষ্ট থাকেন তাহলে তিনি ওই কোম্পানি বা ব্যক্তির তদন্ত হতে বিরত থাকবেন। যারা কমিটিতে আছেন সবাই অত্যন্ত দক্ষ। যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন হয়তো কোনো বিষয়ে স্বার্থসংশ্লিষ্ট থাকতে পারেন।
এর আগে রোববার শেয়ারবাজারের ১২ প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তে ৫ সদস্যের বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি।
বিশেষ এই তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের টেরা রিসোর্সেস ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়া ইউ আহমেদকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এইমস অব বাংলাদেশের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াওয়ার সাইদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মো. শফিকুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জিশান হায়দার ও বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম। তদন্ত কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে কমিশনে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিএসইসি সূত্র জানিয়েছে, গত ১৫ বছরের বিভিন্ন অনিয়ম তদন্তে প্রথম ধাপে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখা হবে। প্রথম ধাপে গঠিত কমিটিকে যে ১২ প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- বেক্সিমকো গ্রীন সুকুক আল ইসতিসনা ও আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রীন জিরো কুপন বন্ড ইসু্যসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় অনুসন্ধান। এই দুটি বন্ডের সুবিধাভোগী ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
এছাড়া চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বসুন্ধরা গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠান এবিজি লিমিটেডের অনুমোদন-মনোনয়ন, শেয়ার বরাদ্দকরণ-অধিগ্রহণ ও মূল্য নির্ধারণসংক্রান্ত, বেস্ট হোল্ডিংসের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও অনুমোদন ও ইসু্য, আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজসংক্রান্ত অনিয়ম ও কারসাজি, সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসসংক্রান্ত অনিয়ম ও কারসাজি, ফরচুন সুশুজসংক্রান্ত যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজি, রিং শাইন টেক্সটাইলের মূলধন উত্তোলন, আর্থিক প্রতিবেদনের মিথ্যা তথ্য ও অর্থ পাচারসংক্রান্ত, একমি পেস্টিসাইডস সংক্রান্ত যাবতীয় অনিয়ম-কারসাজি, কোয়েস্ট বিডিসি (সাবেক পদ্মা প্রিন্টার্স) সংক্রান্ত যাবতীয় অনিয়ম-কারসাজি, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের যাবতীয় অনিয়ম-কারসাজি ও এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার অধিগ্রহণ, অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিসহ যাবতীয় অনিয়ম-কারসাজির ঘটনা তদন্ত করবে পাঁচ সদস্যের এই তদন্ত কমিটি।
বিএসইসি জানিয়েছে, কমিটি মনে করলে কমিটিতে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। আর কমিশনের পক্ষ থেকে কমিটিকে যাবতীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে।