নানা অনিয়মের কারণে ডুবতে বসেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। দুর্নীতিবাজ পরিচালক ও কর্মকর্তারা কোম্পানিকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করে ফেলেছে। তাই বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) চিঠি দিয়েছে।
ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, ব্যাংকিং খাতের আলোচিত দুর্নীতিবাজ পি কে হালদারের সহযোগী সিদ্দিকুর রহমান ও তার ছেলে নিয়াজ রহমান সাকিব কোম্পানিটিকে দখল করে। এরপর থেকেই কোম্পানি থেকে অর্থ পাচার শুরু করে। খোদ বিএসইসির তদন্তেও সিমটেক্সের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, সিদ্দিকুর রহমান ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাবের একক স্বাক্ষরকারী। লেনদেনের কোনো সীমা ছাড়াই তিনি ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন করতে পারতেন। এ সুযোগে তিনি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করলেও বিভিন্ন বিল পরিশোধ করেছেন মাত্র ২৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকার। অর্থাৎ কোম্পানির প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পাচার করা হয়েছে।
বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলায় দুদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, তার স্ত্রী মাহফুজা রহমান, দুই ছেলে নিয়াজ রহমান সাকিব (সিমটেক্সের বর্তমান এমডি) এবং ইসতিয়াক রহমান ইমরান, তার ভাই মো. এনসান আলী শেখ।
ফলে আদালত এই ব্যক্তিদের সিমটেক্সের শেয়ারহোল্ডিং জব্দ করার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া পৃথক আদেশে আদালত মো. সিদ্দিকুর রহমান ও তার স্ত্রী মাহফুজা রহমানের বিরুদ্ধে বিদেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
সিমটেক্সের পূর্বের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) মো. আনিসুর রহমানকে বাদ দিয়ে যে মেজর জেনারেল (অব.) মো. সারোয়ার হোসেনকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডাইরেক্টর করে চেয়ারম্যান বানানো হয়েছে, সেটিও আইন অনুযায়ী সঠিক হয়নি। বিএসইসি করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড ১০.০৬.২০১৮ অনুযায়ী মো. সারোয়ার হোসেন কোনোভাবেই সিমটেক্সে একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডাইরেক্টর হিসেবে থাকতে পারেন না।
চিঠিতে বলা হয়, ইতোপূর্বেই বিএসইসি সিমটেক্সের নানা অনিয়ম তদন্ত করে ৫৬ শতাংশ শেয়ারহোল্ডার সাধারণ জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য সেখানে পাঁচজনের একটি বোর্ড নিয়োগ করেন। কিন্তু পি কে হালদারের সহযোগী পলাতক সিদ্দিকুর রহমান পর্তুগাল থেকে সব চাবিকাঠি নাড়ছে। আর এখানে তার ছেলে নিয়াজ রহমান সাকিব একজন অবৈধ এমডি কোর্টের সেই আদেশকে সাময়িকভাবে স্টে করে দেয়। বিএসইসিতে তা মোকাবিলা করে এবং মহামান্য আদালত ৫৬ শতাংশ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষার্থে বোর্ড পুনর্গঠনের নির্দেশ প্রদান করেন। কাজেই মো. সারোয়ার হোসেনের সেখানে থাকার আর কোনো সুযোগ রইল না।
নিয়াজ রহমান সাকিব সরাসরি পি কে হালদারের সঙ্গে ব্যবসা-বানিজ্য ও আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। তিনি বর্তমানে যে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি সেই সিমটেক্সের তার নামের সব শেয়ার ফ্রিজ রয়েছে। সুতরাং নৈতিকতার বিচারে সে সিমটেক্সের ডাইরেক্টর ও ম্যানেজিং ডাইরেক্টর পদে থাকার আর কোনো অধিকার রাখে না।