তৈরি পোশাক খাতে মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদকে ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ সদস্যরা। সাধারণ সদস্যদের পক্ষে ৭ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত এক সংবাদে সম্মেলনের মাধ্যমে এসব দাবি জানানো হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন অনন্ত গার্মেন্টসের ব্যবস্থপনা পরিচালক ইনামুল হক খান বাবলু, মাইশা ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শীর্ষ সংগঠন হচ্ছে বিজিএমইএ। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশই আসে এই পোশাক শিল্প থেকে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রে এ সেক্টরের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই সংগঠনটি দীর্ঘদিন যাবৎ একটি স্বার্থান্বেসী ও স্বৈরাচারী শাসকের কতিপয় ব্যক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে এর স্বাভাবিক কার্যক্রম আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। ৯ মার্চ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ক্ষমতায় আসে। যা সাধারণ সদস্যদের মনের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
ইনামুল হক খান বাবলু বলেন, বর্তমান বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের পলাতক সভাপতি এসএম মান্নান কচি, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ওই পরিচালনা পর্ষদের অন্য সদস্য তার আজ্ঞাবহ। বিজিএমইএ পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে এসএম মান্নান কচি ও তার দলীয় ক্যাডার বাহিনী দিয়ে সংগঠনটির ক্ষমতা দখল করেন। এ কাজে সাবেক সংসদ সদস্য সালাম মুর্শেদী, মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, মো. খশরু চৌধুরী, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান ও ঢাকা-উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম নিজ বাহিনীসহ সরাসরি অংশ নেন। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীও এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া বলেন, সর্বশেষ গত ৪ আগস্ট মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে বিজিএমইএর পলাতক সভাপতি এসএম মান্নান কচি ও তার সহযোগীরা ছাত্র-জনতার ওপর ব্যাপক হামলা করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দমন-পীড়ন ও হত্যায় উত্তরা ও মিরপুরে বিজিএমইএর পলাতক ও খুনি সভাপতির নেতৃত্বে তার ক্যাডার বাহিনী মূল ভূমিকা পালন করে। এটি সব গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনে কয়েকশ ছাত্র-জনতা নিহত হওয়ার পরও বর্তমান বোর্ড ও সভাপতি কোনো শোকবার্তা দেয়নি। ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলন ও গণজোয়ারে বিজিএমইএ সভাপতি ও তার বোর্ড সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী ভূমিকা পালন করায় তারা দায়িত্ব পালনের নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন। বিগত সংকটে কারখানা খোলা নিয়ে সংগঠনটির কোনো সঠিক নির্দেশনা ছিল না এবং গত কয়েক সপ্তাহে বিজিএমইএ পর্ষদ ব্যবসা পরিচালনায় কার্যকর কোনো নির্দেশনা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার কারণে আমাদের ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতি ও চরম ভোগান্তির শিকার হন।
সংবাদ সম্মেলনে ৭ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
এগুলো হলো- ১. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দালনে ছাত্র-জনতা হত্যাকারী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচির বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলামকে বিজিএমইএর সভাপতি নিয়োগ সাধারণ সদস্যরা মানে না। অবিলম্বে তার নিয়োগ বাতিল ও পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে হবে।
২. সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে দলীয় প্রভাবমুক্ত ২০ সদস্যের একটি অন্তর্বর্তী পরিচালনা বোর্ড গঠন। ৩. অন্তর্বর্তী পরিচালনা বোর্ডের স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে অতিদ্রম্নত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ। ৪. বিজিএমইএর অতীতের সব দুর্নীতির স্বচ্ছ ও সঠিক তদন্তের জন্য একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন।
৫. খুনি স্বৈরাচারী হাসিনার দোসর বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিইউএফটি) বর্তমান চেয়ারম্যান মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনসহ বর্তমান বোর্ড ভেঙে নতুন বোর্ড গঠন। ৬. বিগত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত মো. সেলিম তালুকদারসহ হতাহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া। ৭. বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরকে 'শহীদ সেলিম চত্বর' ঘোষণা করা।