কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষিঋণ নীতিমালা প্রকাশ

কৃষি খাতে ৩৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ

প্রকাশ | ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য রিপোর্ট
মাঠে ধানের বীজ সংগ্রহ করছেন কৃষক -ফাইল ছবি
চলতি অর্থবছরে দেশের কৃষি খাতে ৩৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোকে ১২ হাজার ৬১৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। বাকি ২৫ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করবে দেশের বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কৃষি ও পলস্নী উন্নয়ন ঋণ নীতিমালা প্রকাশ করা হয়। এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এ নীতিমালার ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি ও পলস্নী উন্নয়ন খাতে ৩৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ছিল। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো ৩৭ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা কৃষি ও পলস্নী ঋণ বিতরণ করেছে। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো লক্ষ্যের চেয়েও কৃষি খাতে বেশি ঋণ বিতরণ করতে পেরেছে। ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব নেটওয়ার্ক (শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং, দলবদ্ধ ঋণ বিতরণ) ও ব্যাংক-এমএফআই লিংকেজ ব্যবহার করতে পারবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৫০ শতাংশের কম হতে পারবে না। এবার মোট লক্ষ্যমাত্রার ৬০ শতাংশ শস্য ও ফসল খাতে, ১৩ শতাংশ মৎস্য খাতে এবং ১৫ শতাংশ প্রাণিসম্পদ খাতে ঋণ বিতরণ করতে হবে। ব্যাংকগুলোর কৃষি ও পলস্নী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার অনর্জিত অংশ কৃষি খাতেই বিনিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট কমন ফান্ড (বিবিএডিসিএফ) নামে একটি ফান্ড গঠন করেছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ ব্যাংকগুলোর অনর্জিত অংশ এ ফান্ডে জমা করতে হবে। এ জমাকৃত অর্থের বিপরীতে তাদের ২ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হবে। এ কমন ফান্ডে জমাকৃত অর্থ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকারী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে কৃষি ও পলস্নী ঋণ নীতিমালার আওতায় গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করা হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতি বছরই কৃষি খাতসংশ্লিষ্ট নিত্যনতুন বিষয় নিয়ে কৃষি ও গ্রামীণ ঋণ নীতিমালা তৈরি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবারের নীতিমালায় উলেস্নখযোগ্য সংযোজনগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষি ও গ্রামীণ ঋণের সুযোগ বাড়াতে শজিনা, মুর্তা, পেরিলার মতো নতুন নতুন ফসল আবাদ ও উৎপাদন এবং মৎস্য খাতে শুঁটকি ও ঝিনুক প্রক্রিয়াকরণকে এ ঋণ নীতিমালার আওতায় আনা হয়েছে। সংযোজিত হয়েছে কৃষি উৎপাদনে ইসলামী ব্যাংকিং পদ্ধতির আওতায় শরিয়াহভিত্তিক বিনিয়োগ পদ্ধতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন কৃষিঋণ নীতিমালায় পশুপালন খাতে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত এবং গ্রামীণ খাতে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে ডিপি নোট (সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ১০ থেকে ৫০ টাকার স্ট্যাম্প), ব্যক্তিগত জামানতপত্র (স্ট্যাম্পের প্রয়োজন নেই) ও জামানতের অঙ্গীকারনামা (লেটার অব হাইপোথিকেশন; স্ট্যাম্পের প্রয়োজন নেই) ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গীকারপত্রের (চার্জ ডকুমেন্টস) প্রয়োজন নেই বলে উলেস্নখ করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় গ্রামীণ অর্থায়নের ক্ষেত্রে 'শীতলপাটি বুনন' শিল্পকে আয়বর্ধক খাতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরিবর্তন আনা হয়েছে কাঁকড়া, কুঁচিয়া, কোরাল ও অন্যান্য অপ্রচলিত মৎস্য আহরণ খাতে ঋণ বিতরণসংক্রান্ত অনুচ্ছেদে। এর সঙ্গে কৃষিপণ্য পরিবহণ খাতে গ্রম্নপভিত্তিক কৃষিঋণ বিতরণসংক্রান্ত নির্দেশনা এতে যুক্ত করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে ভুট্টা ও পেঁয়াজ উৎপাদনে ঋণ বিতরণের সময়সীমা। নীতিমালায় বলা হয়েছে, কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে অংশগ্রহণকারী কৃষকদের তালিকা কৃষিঋণ বিভাগে জমা দেওয়ার সময় অবশ্যই এতে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর যুক্ত করতে হবে। এছাড়া ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম-সংক্রান্ত নতুন কিছু নির্দেশনাও এতে যুক্ত করা হয়েছে।