স্বাভাবিক সার্কিটে ফিরে ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার
প্রকাশ | ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
অর্থ-বাণিজ্য রিপোর্ট
শেয়ারের দাম বাড়া-কমার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক সার্কিট ব্রেকার ফিরিয়ে আনার পর দেশের শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে সবকয়টি মূল্যসূচক। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতেও সবকয়টি মূল্যসূচক বেড়েছে। একই সঙ্গে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে।
এর আগে শেয়ারবাজারে দরপতন ঠেকাতে গত এপ্রিলে সার্কিট ব্রেকারের নিয়মে পরিবর্তন করে বিএসইসি। একদিনে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ দাম কমার নিয়ম কার্যকর করে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন। তবে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নিয়মেই রাখা হয়।
সার্কিট ব্রেকারের এই নিয়ম কার্যকর করার কারণে শেয়ারবাজারের মন্দাভাব আরও বাড়ে। তবে এর সুযোগ নিয়ে কারসাজিতে মেতে ওঠে একটি চক্র। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই নিয়মের কারণে একটি বিশেষ চক্র সুবিধা পায়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর বিএসইসি চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। একই সঙ্গে দুই কমিশনারও পদত্যাগ করেন।
এরপর অন্তর্বর্তী সরকার বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে শেয়ারবাজারে স্বাভাবিক সার্কিট ব্রেকার ফিরিয়ে আনেন। বৃহস্পতিবার থেকে শেয়ারবাজারে স্বাভাবিক সার্কিট ব্রেকার কার্যকর হয়েছে।
শেয়ারবাজারে স্বাভাবিক সার্কিট ব্রেকার ফিরিয়ে আনায় কিছু বিনিয়োগকারী গত বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা করেন। বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ আশঙ্কা করছিলেন, বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে দরপতন হতে পারে।
এ পরিস্থিতি বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। অবশ্য অল্প সময়ের মধ্যেই বাজারে ক্রেতার আধিক্য ঘটে। এতে ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ারবাজার। দাম কমার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় চলে আসে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার এই প্রবণতা চলে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। এতে একদিকে দাম বাড়ার তালিকা বড় হয়েছে, অন্যদিকে বেড়েছে সবকয়টি মূল্যসূচক। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ২৯৮ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৭ প্রতিষ্ঠানের। এছাড়া ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪৭ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৮০৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১২৪ পয়েন্টে উঠে এসেছে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ২৪১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৯৬৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৮৯৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৬৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৭৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এমজেএল বাংলাদেশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৭ কোটি ৭১ টাকার। ৪৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে অলিম্পিক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- রেনেটা, গ্রামীণফোন, ব্র্যাক ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, প্রগতী লাইফ ইন্সু্যরেন্স, ওরিয়ন ফার্মা এবং সিটি ব্যাংক।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১১৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৩৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭০টির এবং ১৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৮ কোটি ২২ লাখ টাকা।