চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিবারতন্ত্র, স্বৈরশাসন ও ভোটবিহীন বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে নতুন নির্বাচনের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ব্যবসায়ীরা। রোববার বেলা ১১টায় নগরের আগ্রাবাদের চেম্বার ভবনের সামনে চট্টগ্রামের বৈষম্যের শিকার বঞ্চিত ব্যবসায়ী ফোরামের উদ্যোগে এই অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম বঞ্চিত ব্যবসায়ী ফোরামের আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর পরিচালনায় এতে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে সংগঠনের আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বার কোনো পারিবারিক প্রতিষ্ঠান নয়। কিন্তু বিগত কমিটিগুলো এটিকে পারিবারিক সংগঠন বানিয়ে ফেলেছে। ব্যবসায়ী সংগঠনে ব্যবসায়ীদের সুযোগ না দিয়ে ছেলেমেয়ে-জামাতাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আসল ব্যবসায়ীরা সুযোগ পাননি। ঐতিহ্যবাহী চিটাগাং চেম্বার অব কমার্সকে ১৭ বছর ধরে স্বৈরশাসনের আজ্ঞাবহ করে রাখা হয়েছে। স্বৈরশাসন ও পরিবারতন্ত্র দিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।
\হআমরা চাই, ব্যবসাবান্ধব চিটাগাং চেম্বারের ভূমিকা নিশ্চিত করতে নতুন কমিটি গঠনের করা হোক।
চেম্বারকে সংস্কারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবারতন্ত্রের কবলে পড়ে চট্টগ্রাম চেম্বার দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেনি। তাই ভোটবিহীন নির্বাচিত বর্তমান চেম্বার পরিচালনা পর্ষদকে পদত্যাগ করতে হবে। চেম্বারকে সংস্কার করতে হবে। পরিবারতন্ত্রের কবলে পড়ে চিটাগাং চেম্বার ব্যবসায়ীদের কথা বলতে পারেনি। তাদের বলয়ের বাইরের কারোর চেম্বারের পরিচালক পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ ছিল না। তাই এবার সম্মান থাকতে পদত্যাগ করুন। তা না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করব।
বিজিএপিএমইএ পরিচালক শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সাবেক দুই সভাপতি এমএ লতিফ ও মাহবুবুল আলম ১৭ বছর ধরে চট্টগ্রাম চেম্বারকে স্বৈরশাসনের আজ্ঞাবহ ও পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। এর ফলে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাই সাবেক দুই সভাপতির কবল থেকে চট্টগ্রাম চেম্বারকে মুক্ত করে সাধারণ ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বশীল চেম্বারে পরিণত করতে হবে।
সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য জামাল উদ্দিন বাবলু বলেন, পরিবারতন্ত্রের কারণে চেম্বারের অনেক কর্মচারীর চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত ট্যাগ দিয়ে অনেককে বিনা কারণে চেম্বার থেকে চাকরিচু্যত করা হয়েছে। অবিলম্বে তাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে।
ফাল্গুনী ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমাইল খান বলেন, যারা চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আছেন, তারাই চেম্বারের সদস্য হবেন এবং নেতৃত্ব নির্বাচিত করবেন। মেম্বারশিপ সহজীকরণ করতে হবে। নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তি ঘুরেফিরে চট্টগ্রাম চেম্বারে দীর্ঘদিন ধরে রাজত্ব করে আসছেন। তিনি ওমর হাজ্জাজসহ পরিচালনা পর্ষদ নেতাদের অবিলম্বে পদত্যাগের আহ্বান জানান।
বন্দর ট্রাক কাভার ভ্যান মালিক অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোহেল বলেন, আজ এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আমরা নির্যাতিত অবহেলিত ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়েছি। পরিবারতন্ত্রের কবলে পড়ায় চট্টগ্রাম চেম্বার সাধারণ ব্যবসায়ীদের হয়ে কথা বলতে পারেনি। ব্যবসায়ীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত দীর্ঘদিন ধরে। ব্যবসায়ীরা যদি ঠিকভাবে ব্যবসা করতে না পারে, তাহলে তাদের পক্ষে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী শওকত আলী বলেন, চেম্বারের বর্তমান সদস্য তালিকা যাচাই করে সেখান থেকে নির্দিষ্ট ব্যক্তির পকেট ভোট ব্যাংক বিলুপ্ত করে একটি সঠিক ভোটার তালিকা তৈরি করে দক্ষ নেতৃত্ব বাছাইয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন- সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শাহনওয়াজ, বিজিএমইএ'র পরিচালক আবছার হোসেন, সদস্য সাইফুল ইসলাম, এস এম হক, সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য জামাল উদ্দিন বাবলু, সুলতানা ট্রেডার্সের রোকন উদ্দিন মাহমুদ, সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী শওকত আলী, বার্থ অপারেটর মশিয়ুল আলম স্বপন, ফাল্গুনী ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমাইল খান, ব্রিকস অ্যাসোসিয়েশনের জাহাঙ্গীর আলম, বন্দর ট্রাক কাভার ভ্যান মালিক ও কন্ট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোহেল, রিয়াজুদ্দিন বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আলহাজ ছালামত আলী, এছাক ব্রাদার্স কনটেইনার ডিপোর এমডি মো. জুয়েল, কাভার ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি আজিজুল হক, বারভিডার সদস্য জসিম উদ্দিন ফিরোজ, জাহাঙ্গীর আলম, বিজিএপিএমইএ পরিচালক বেলাল হোসেন, টায়ার টিউব মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান, ফ্রেইড ফরোয়ার্ড অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মান্নান পাটোয়ারী প্রমুখ।