বিবিসিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর

শিগরিরই বাড়ছে সুদের হার

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগামী মাসে সুদহার ১০ শতাংশ বা তার বেশি করবেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বাংলাদেশের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে

প্রকাশ | ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
আহসান এইচ মনসুর
দু-একদিনের মধ্যে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার ৮.৫ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর বিবিসিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন। আহসান এইচ মনসুর বলেছেন যে, তিনি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগামী মাসে সুদহার ১০ শতাংশ বা তার বেশি করবেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বাংলাদেশের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতায় রেমিট্যান্স কমে যাওয়া ও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টিও চাপ তৈরি করছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদনের সময় বাংলাদেশকে তার মুদ্রানীতি কঠোর করতে এবং বিনিময় হার নমনীয় রাখতে বলেছিল। আহসান এইচ মনসুর বলছেন যে, আরও বাড়তি ৩ বিলিয়ন ডলারের জন্য তিনি সংস্থাটির সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ১.৫ বিলিয়ন ডলার এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির কাছে ১ বিলিয়ন ডলার করে চাইছে বাংলাদেশ। এই মাসের শুরুর দিকে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচু্যত হওয়ার আগে ইন্টারনেট বস্ন্যাকআউট এবং কারফিউও দামের ওপর চাপ ফেলেছে। আহসান এইচ মনসুর, যিনি একজন প্রবীণ অর্থনীতিবিদ, আইএমএফে তিন দশক কাটিয়েছেন। গত সপ্তাহে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মনোনীত করে। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আহসান এইচ মনসুর আরও বলেছেন যে, দেশের ব্যাংকিং খাত পরিষ্কার করা তার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তিনি বলেন, আর্থিক ব্যবস্থায় পরিকল্পিত ডাকাতি হয়েছে, যা ব্যাংকগুলোর বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। সেই সঙ্গে শেয়ার বাজার ও বৃহত্তর অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। ক্ষমতাচু্যত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে জড়িত কিছু গোষ্ঠীর ঋণ খেলাপির কারণে দেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলো থেকে হঠাৎ মানুষের টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। এই খেলাপি ঋণগুলো আসলে রীতিমতো ব্যাংক ডাকাতি। তারা টাকা নিয়ে সিঙ্গাপুর, দুবাই, লন্ডনসহ আরও কিছু জায়গায় পাচার করেছে। তাই আমাদের প্রথম প্রচেষ্টা হবে বিষয়টা নিয়ে কাজ করা এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করা। এটা করার পাশাপাশি আমাদের ব্যাংকিংব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে হবে। তাই আমরা একটি ব্যাংকিং কমিশন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি। এই কমিশনের কাজ হবে ব্যাংকগুলোর বড় পরিসরে অডিট করা এবং বোর্ড পরিবর্তন, ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন, তারল্য সহায়তা বা কিছু ছোট ব্যাংকের ক্ষেত্রে একীভূতকরণের মতো পরামর্শ দেওয়া। নতুন এই গভর্নর বলেন, শরিয়াহভিত্তিক কিছু ইসলামী ব্যাংকে সরকারকে হয়তো ১৫ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিতে হবে; কার্যত যার অর্থ দাঁড়াবে ব্যাংকগুলোকে জাতীয়করণ করা। আমরা এটা করতে চাই না। কিন্তু এই লোকগুলো অনেক টাকা ঋণ নিয়েছে, যা তারা ফেরত দিচ্ছে না। আমাদের অন্তত আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে হবে। মুদ্রানীতিতে সংস্কারের পাশাপাশি গভর্নর এও আশা করেন যে বাংলাদেশের নতুন সরকার চলমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরবে। বস্নমবার্গের তথ্য মতে, শেখ হাসিনার সরকার এই ব্যয় কমিয়েছিল এবং দেশের রাজস্ব ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ৪.৬ শতাংশে নামিয়েছিল, যা ২০১৫ সালের পর সর্বনিম্ন। গর্ভনর আরও বলেন, ব্যয় আরও ৯-১০ শতাংশ কমাতে হবে, যাতে বেসরকারি খাতের জন্য আরও বেশি ঋণ পাওয়া যায়। গত সপ্তাহের শেষের দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস কূটনীতিকদের বলেছিলেন যে তার সরকার আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাবে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে কত সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে গর্ভনর বলেন, তিন বছর বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে।