শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শেয়ারবাজারে কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেলেও নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই পুরনো পতনের বৃত্তে আটকে গেছে দেশের শেয়ারবাজার। অব্যাহতভাবে শেয়ারবাজারে দরপতন হচ্ছে। কিছুতেই পতন থামছে না। দিন যত যাচ্ছে শেয়ারবাজারে ক্রেতা সংকট ততো প্রকট হচ্ছে। ফলে বাড়ছে পতনের মাত্রাও। এতে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে টানা চার কার্যদিবস উলস্নম্ফন দেখা যায়। চার দিনে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে প্রায় ৮০০ পয়েন্ট। শেয়ারবাজারে এমন উলস্নম্ফন দেখে বড় লোকসান থেকে বেরিয়ে আসার স্বপ্ন দেখতে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের সেই স্বপ্ন সত্যি হয়নি। শেয়ারবাজারে আগের মতোই টানা দরপতন চলছে।
গত কয়েক কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় বুধবারও (২১ আগস্ট) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, এর প্রায় ৩৪ গুণ বেশি প্রতিষ্ঠানের স্থান হয়েছে দাম কমার তালিকায়। আবার দাম কমার তালিকায় থাকা শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম এক দিনে যতটা কমা সম্ভব, ততোটাই কমেছে।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় যে কয়টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এর ২৩ গুণ বেশি রয়েছে দাম কমার তালিকায়। ফলে এই বাজারটিতেও সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা আট কার্যদিবস বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমল। আর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এখনো পর্যন্ত লেনদেন হওয়া ৯ কার্যদিবসের মধ্যে আট কার্যদিবসেই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে।
শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে বাজারে কিছুটা ক্রেতা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান বা গ্রম্নপের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসছে, তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার দাম বেশি কমছে। সার্বিকভাবে বাজারে এখন একটা অস্থিরতা বিরাজ করছে। যে কারণে টানা দরপতন দেখা যাচ্ছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বুধবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। লেনদেনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দরপতনের ধারা অব্যাহত থাকে। ফলে মূল্যসূচকের বড় পতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ১১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৭১টি প্রতিষ্ঠানের। আর ১২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১০৮ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ৬০৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪৫ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ৪৭ পয়েন্টে নেমে গেছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৮ পয়েন্ট কমে এক হাজার ২০১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
বাজারের এই চিত্র সম্পর্কে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, এস আলম গ্রম্নপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৮২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনাবেচা ও হন্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকজনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। সবকিচু মিলেই শেয়ারবাজারে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। এ কারণেই বাজারে এমন দরপতন।
তিনি বলেন, এই অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বাজারে নতুন বিনিয়োগ করছেন না। তারা সাইড লাইনে বসে বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, মূল্যসূচকের বড় পতন হলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৩৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫১৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সেই হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১৮ কোটি ২২ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৭৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইউসিবি ব্যাংকের ৫২ কোটি ৪৮ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৪০ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সিটি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, লাভেলো আইসক্রিম, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, গ্রামীণফোন এবং সি পার্ল বিচ রিসোর্ট।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২২৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আটটির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৭টির এবং আটটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।