মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) দেশটির জিডিপি বেড়েছে দশমিক ৬ শতাংশ। প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল দশমিক ৭ শতাংশ। ব্রিটেনের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর সূত্রে (ওএনএস) এ তথ্য জানা গেছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
তবে জুনে জিডিপিতে মাসভিত্তিক প্রবৃদ্ধির তথ্য ছিল না। সে সময় যুক্তরাজ্যে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ক্রেতারা কম বের হওয়ায় বেচাকেনা কম হয়েছে।
কনফেডারেশন অব ব্রিটিশ ইন্ডাস্ট্রির (সিবিআই) প্রধান অর্থনীতিবিদ বেন জোনস বলেন, 'পরিসংখ্যান যা বলছে, এতে ব্রিটেনের অর্থনীতি মন্দ কাটিয়ে উঠছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের চ্যালেঞ্জ কিন্তু এখনো রয়েছে। যদিও প্রান্তিকের হিসেবে অর্থনীতির পুরো চিত্র পুরোপুরি বোঝা মুশকিল, তবু সামগ্রিকভাবে মন্দা কাটিয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছে।'
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেবা খাতে দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ৮ শতাংশ। এতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উন্নয়ন খাত। পাশাপাশি আইটি, পরিবহণ, আইন, স্থাপত্য ও প্রকৌশল খাতেরও অবদান ছিল।
তবে ভোক্তা সেবা খাতে একই সময় জিডিপি কমেছে দশমিক ১ শতাংশ। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে এ সময় খুচরা পর্যায়ে বিকিকিনি কম হওয়ায় জিডিপি কমেছে। উৎপাদন ও নির্মাণ খাতেও একই অবস্থা দেখা গেছে।
সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে জি৭ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে যুক্তরাজ্য। এদিকে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইউরো অঞ্চল ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ৩ ও দশমিক ৭ শতাংশ।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ফলে গত বছরের শেষদিকে মন্দার কবলে পড়ে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি। সাধারণত পরপর দুই প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হলে তাকে মন্দা বলা হয়। স্বাভাবিক সময় সাধারণত অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয়। গড়পড়তা হিসাব অনুসারে, উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মূল্য সাধারণত বাড়ে এবং এতে মানুষের হাতে কিছুটা অর্থ জমে। অর্থাৎ জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়। কিন্তু কখনো কখনো উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মূল্য কমে। পুরো এক প্রান্তিকে অর্থাৎ টানা তিন মাস যদি জিডিপি সংকুচিত হয়, তাহলে ধরে নেয়া হয়, এটি সে দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনীতিতে সাম্প্রতিক যে অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে, তা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ মাসের শুরুতে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ২০২৪ সালের জন্য জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দশমিক ৫ থেকে ১ দশমিক ২৫ শতাংশে বৃদ্ধি করে। তবে উচ্চ সুদহারের কারণে মধ্যমেয়াদে অর্থনীতিতে মন্থরগতি থাকতে পারে বলে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়। এদিকে বুধবার প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি পূর্বাভাসের চেয়ে কম বেড়ে ২ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
রেজু্যলেশন ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সাইমন পিটওয়ে বলেন, 'ব্রিটেনের মধ্যমেয়াদের রেকর্ড খুব একটা সুবিধাজনক নয়। বরাবরই জীবনযাত্রার মানের চেয়ে উৎপাদনশীলতা কম দেখা গেছে। এদিকে নজর না দিলে দেশের জীবনযাত্রার মান স্থবির হয়ে পড়বে। এতে দেশের অর্থনীতি আবারও পিছিয়ে যাবে।'