মার্কিন অর্থনীতিতে চাঙ্গাভাবের প্রত্যাশা। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক পুঁজিবাজারেও। এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে শেয়ারবাজার সূচক এখন ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গেছে। ফলে আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ সুদহার কমানোর বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সব মিলিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে। দেশটির অর্থনীতি নিয়ে এমন আশাবাদ তৈরি হওয়ায় ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে বৈশ্বিক পুঁজিবাজার।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন অর্থনীতির সম্ভাব্য চাঙ্গাভাবের প্রভাব পড়েছে এশিয়ার পুঁজিবাজারে। জাপানের পুঁজিবাজার আদর্শ ট্রপিক সূচক গতকাল সকাল নাগাদ ২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ে। অন্যদিকে প্রযুক্তি ও শিল্পপ্রধান নিক্কেই সূচক ২২৫ পয়েন্ট বা ৩ শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া, হংকং, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ায়ও শেয়ারের দাম বেড়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান পুঁজিবাজার সূচকগুলো উলেস্নখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি৫০০ গত বৃহস্পতিবার বছরের অন্যতম ভালো দিন পার করেছে। এদিন এসঅ্যান্ডপি৫০০ সূচক ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। এ নিয়ে টানা ছয় দিন সূচকটি দিন শেষ করল ঊর্ধ্বমুখিতায়। বিষয়টিকে মার্কিন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন বাজার পর্যবেক্ষকরা। এই সূচক গত মাসে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছিল।
ডাউ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজও গত বৃহস্পতিবার ৫৫৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। গত মাসে ব্যাপক দরপতনের পর এনভিডিয়া ও অন্য বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দাম বেড়েছে। এতে বৃহস্পতিবার নাসডাক কম্পোজিট বার্স্টের সূচক ২ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রে আগের মাসের তুলনায় জুনে ভোক্তামূল্য সামান্য কমলেও জুলাইয়ে দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। মার্কিন শ্রম বিভাগের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের জুলাইয়ের তুলনায় গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ছিল ২ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০২১ সালের মার্চের পর সর্বনিম্ন। অন্যদিকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৩ শতাংশ। জুলাইয়ের এ ধারা বজায় রাখলে সামনে মূল্যস্ফীতির চাপ আরও কম হতে পারে।
এদিকে আশাব্যঞ্জক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বন্ডের ইল্ডও বেড়েছে। বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, দেশটির ভোক্তারা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ব্যয় করছেন। আরেক অংশ বলছেন, বেকারত্ব সুবিধার জন্য খুব কম মার্কিন নাগরিক আবেদন করেছেন। এসব অবস্থা দেশটির অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দেয়।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থান নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে প্রত্যাশার চেয়ে কম কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে বলে জানা যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নির্ধারিত সুদহার অর্থনীতির ওপর চাপ তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু মূল্যস্ফীতি প্রতিবেদনের পর এই আশঙ্কা কিছুটা কমে এসেছে। একই সঙ্গে সেপ্টেম্বর নাগাদ সুদহার কমানোর সম্ভাবনাও আরও স্পষ্ট হয়েছে। অ্যানেক্স ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রায়ান জ্যাকবসেন বলেন, '(অর্থনৈতিক) প্রবৃদ্ধি কমার আশঙ্কাও এখনো ফুরিয়ে যায়নি। কিন্তু তা কিছুটা কমে এসেছে।'
এদিকে, সংবাদমাধ্যম আরটিইর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার টানা চার সেশনে ঊর্ধ্বমুখী ছিল ইউরোপের পুঁজিবাজার। বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে আশঙ্কা ও সেপ্টেম্বর নাগাদ ফেডের সুদহার কমানো নিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
এদিন প্যারিসের সিএসি দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৭ হাজার ৪৩১ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। ফ্রাঙ্কফুটের ডিএক্স সূচক বেড়েছে দশমিক ৩ শতাংশ। তবে একই সময় লন্ডনের এফটিএসই সূচক দশমিক ১৭ শতাংশ কমে ৮ হাজার ৩২৪ পয়েন্টে নেমে গেছে। এ ছাড়া নেদারল্যান্ডসের আইএসইকিউ সূচকও দশমিক ৫৫ শতাংশ কমে গেছে। তবে দেশটির গস্নানিবিয়া শেয়ারের দাম দশমিক ৬২ শতাংশ এবং আইরিশ রেসিডেনশিয়াল প্রপার্টিজের দাম দশমিক ৫৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে পিটিএসবি ও কিংসস্প্যানের শেয়ার দাম কমেছে।