২০২৩-২৪ অর্থবছর
বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানি কমেছে
প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি কমেছে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি কমে হয়েছে ১৭ লাখ ২১ হাজার ৪৪১ টন। যা গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে তুলনায় আমদানি ২ লাখ ৮২ হাজার ২২৯ টন কম। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছিল ১৮ লাখ ৯৫ হাজার ৫৪৩ টন পণ্য।
কাস্টমস ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে খাদ্যপণ্য ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতে ব্যাংক এলসি খুলছে না। এ কারণে ব্যবসায়ীরা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করতে পারেননি।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ লাখ ৪৪ হাজার টন। আমদানি হয়েছিল ২২ লাখ ১৪ হাজার টন পণ্য। সে হিসেবে আমদানি কম হয়েছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার টন।
ওই অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টম হাউসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা, সেখানে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। সে হিসেবে ৫৫৮ কোটি ৮ লাখ টাকার রাজস্ব কম আয় হয়েছিল।
২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, সেখানে আয় হয়েছিল ৪ হাজার ১৪৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ওই বছর ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৯৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
২০১৯-২১ অর্থবছরে পণ্য আমদানি করা হয়েছিল ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য আমদানি করা হয় ২০ লাখ ১১ হাজার ৬ টন পণ্য।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, 'যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার কারণে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা বেনাপোল দিয়ে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে সরকার এলসিতে শতভাগ মার্জিন শর্ত দিয়েছে। আবার ব্যাংকগুলো ডলার সংকট দেখিয়ে এলসি খুলছে না। যে কারণে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি কমে গেছে।'
যশোরের মোটর সাইকেল পার্টসের আমদানিকারক মদিনা অটোসের মালিক ফারুক হোসেন বলেন, 'চাহিদামতো ডলার না পাওয়ার কারণে আমরা এলসি কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। আবার বাজারে বিক্রিও কমেছে। সম্প্রতি ব্যাংকগুলো সুদহার অনেক বাড়িয়েছে। এতে করে আমদানিকারকরা ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন না। যে কারণে অনেক ব্যবসায়ী পণ্য আমদানি করছেন না।'
বেনাপোল স্থলবন্দরের আরেক আমদানিকারক জাহিদ হোসেন বলেন, 'আমরা মোটর পার্টস আমদানি করে তা সারাদেশে বিক্রি করে থাকি। গত কয়েক বছর ধরে যশোরের ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে না। যে কারণে আমরা পণ্য আমদানি করতে পারছি না। ফলে ব্যবসায়িকভাবে আমরা লোকসানের মুখে পড়েছি। সামনে কী পরিস্থিতি হবে কে জানে।'
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট কমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, এলসি করতে না পারায় ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। ফলে আমদানি কমে গেছে। তবে চলতি বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করেছেন তিনি।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, 'সরকার এলসি করতে শতভাগ মার্জিন দেওয়ার নিয়ম করেছে। গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে না। এতে আমদানির সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার ব্যবসায়ী অর্থনৈতিকভাবে দুরবস্থায় রয়েছেন। একে তো ব্যবসার অবস্থা ভালো নয়, তার ওপর পণ্য আমদানি করতে না পারলে আমদানির সঙ্গে জড়িতরা আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাবে।' অভিযোগ প্রসঙ্গে বেনাপোল কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার সাফায়েত হোসেন দাবি করেন, বন্দরে আমদানিকারকদের কোনো রকম হয়রানি হয় না।