বিএসইসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহসীন চৌধুরী

সালমান এফ রহমানকে দেওয়া বিশেষ সুবিধা বাতিল

প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য রিপোর্ট
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ভবন -সংগৃহীত
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পদত্যাগ করার আগে সালমান এফ রহমানকে দেওয়া বিশেষ সুবিধা বাতিল হয়েছে। রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কমিশনার মোহসীন চৌধুরীকে বিএসইসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়। এরপর তিনি আগের চেয়ারম্যানের নির্দেশনাটি বাতিল করেন। বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম অজ্ঞাত স্থান থেকে গত বৃহস্পতিবার সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকোসহ ৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস (সর্বনিম্ন দরসীমা) তুলে দেওয়ার নির্দেশনা জারি করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বিএসইসির চেয়ারম্যান অফিস না করলেও হঠাৎ করে নির্বাহী আদেশে ফ্লোর প্রাইস বাতিল করা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গতকাল রোববার থেকে বেক্সিমকো, খুলনা পাওয়ার ও শাহজিবাজার পাওয়ার এবং ১৪ আগস্ট থেকে বিএসআরএম লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার হওয়ার কথা ছিল। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এটি বাতিল করার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন। রোববার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপ-সচিব ফরিদা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এক আদেশে জানানো হয়, বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পদত্যাগপত্র দাখিলের তারিখ (১০ আগস্ট) থেকে এ আদেশ কার্যকর হয়েছে। নানা অভিযোগ মাথায় নিয়ে শিবলী রুবাইয়াত অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবর শনিবার তিনি ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠান। পদত্যাগ না করলে তাকে অপসারণ করা হবে এমন আশঙ্কা থেকেই তিনি পদ ছাড়েন। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর বিরোধিতা সত্যেও চলতি বছরের ২৮ মে তাকে ৪ বছরের জন্য পুনঃনিয়োগ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ২০২০ সালের ১৭ মে তাকে প্রথমবার বিএসইসির চেয়ারম্যান করা হয়। খেলাপি ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ২০২০ সালে বিএসইসিতে যোগদান করেন শিবলী রুবাইয়াত। এরপর তার বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ ছিল অভিনব পদ্ধতিতে দুর্বল কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে কোম্পানি দখল। তার সময়ে তিন বছরে এভাবে ২৬টি কোম্পানির মালিকানা বদল হয়েছে। অপরাধীদের আশ্রয় স্থল হয়ে উঠেন তিনি। এ সময় বিভিন্ন অপরাধ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত বেপরোয়া ছিলেন তিনি। শেয়ারবাজারে কারসাজিসহ থেকে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে গড়েন সম্পদের পাহাড়। অপরাধের জন্য কারসাজির চক্রকে সঙ্গে নিয়ে বিশাল অসাধু সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এই সিন্ডিকেটে কমিশনের ভেতরের কর্মকর্তা, স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গ্যাম্বলার, ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী আমলা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থমন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যমের লোকজনও রয়েছেন। বিএসইসির জনবল নিয়োগ পদোন্নতিতে জালিয়াতি, দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানির আগের মামলা বাতিল করে দিয়ে তাদের অব্যাহতি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানির আগের মামলা বাতিল করে দিয়ে তাদের দায়মুক্তি দিয়েছেন তিনি। বিশালসংখ্যক জনবল নিয়োগে জালিয়াতি ও আইনলংঘন করে পদোন্নতির ঘটনায় তাকে সহায়তা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক আব্দুলস্নাহ আল মাহমুদ এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের নির্বাহী চেয়ারম্যান মোহাম্মদ তারেক। আর জনবল নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে মৌখিক পরীক্ষা নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের সদস্য ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের ভুয়া ভর্তি, ব্যাপক সমালোচিত পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি দিয়ে সমালোচিত হন তিনি। এছাড়াও ছাগলকান্ডে চাকরি হারানো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানকে শেয়ারবাজারে সব ধরনের সহায়তা করেন শিবলী রুবাইয়াত।