আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর সারাদেশে নিরাপত্তার অভাবে বেশিরভাগ ব্যাংকের এটিএম বুথ বন্ধ রয়েছে। কিছু ব্যাংকের বুথ খোলা থাকলেও তাতে কোনো টাকা নেই। পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোর সব শাখা এখনো খোলেনি। নগদ এক লাখ টাকার বেশি তোলার অনুমতিও ছিল না। এরপর শুক্র ও শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। এর ফলে নগদ টাকার তীব্র সংকটে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বেশিরভাগ এটিএমে অর্থ সরবরাহের কাজটি করা হয় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তৃতীয় পক্ষের এ সেবা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে বেশিরভাগ এটিএমে টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বন্ধ হয়ে গেছে দেশজুড়ে বেশিরভাগ ব্যাংকের এটিএম সেবা।
গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন ব্যাংকের একাধিক এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারেননি সাধারণ মানুষ। বুথে টাকা না থাকায় এমন সংকট তৈরি হয়েছে।
পল্টনে একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা তুলতে এসেছিলেন জাবের হোসেন। তিনি বলেন, জরুরি প্রয়োজনে কিছু টাকা তুলতে এসেছিলাম। তবে এই ব্যাংক ছাড়াও আশপাশের কোনো ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। একদিন আগেও টাকা তুলতে পারিনি। তাই আজকেও আবার খালি হাতেই চলে যেতে হচ্ছে।
এ ছাড়া কয়েকটি ব্যাংকের বুথ বন্ধ থাকায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে কয়েক দিন ধরে সংকটে পড়েছেন। আবার অনেক এটিএম বুথ সন্ধ্যার আগেই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তাকর্মীরা বুথের শাটার নামিয়ে পাহারা দিচ্ছে। মূলত নিরাপত্তাহীনতার কারণে এসব বুথ বন্ধ বলে জানিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ না থাকায় বুথগুলোয় টাকা নিয়ে আসতে পারছে না।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, যতটা না টাকার সংকট তার চেয়ে বেশি নিরাপত্তার শঙ্কায় ব্যাংকগুলো তাদের এটিএম কার্যক্রম কমিয়ে দিয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে টাকা পরিবহণের ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না অনেক ব্যাংক ও এটিএমে অর্থ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও চাহিদা অনুযায়ী টাকা পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত মে মাস শেষে দেশে বিভিন্ন ব্যাংকের মোট এটিএমের সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৪২৮। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে ৯ হাজার ৪০৯টি আর গ্রামাঞ্চলে ৪ হাজার ১৯টি। এটিএম ছাড়া সিআরএমের (ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন) মাধ্যমেও টাকা উত্তোলন করা যায়।
জানা যায়, দেশের বেসরকারি খাতের অনেক ব্যাংক এখন এটিএমের বদলে সিআরএমের প্রতি ঝুঁকছে। সিআরএমে টাকার উত্তোলনের পাশাপাশি নগদ জমারও সুযোগ রয়েছে। এ কারণে ধীরে ধীরে সিআরএমের সংখ্যা বাড়ছে। গত মে মাস শেষে দেশে সিআরএমের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৫০। এসব সিআরএমের সিংহভাগই শহরাঞ্চলে, যা ৩ হাজার ৯৮৫টি।