আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর থেকে যেন পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটে চলছে। বিদায়ী সপ্তাহে অর্থাৎ ৪ জুন থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বাড়ছে সূচক ও লেনদেন। ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৫৮ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা।
বিগত সপ্তাহে লেনদেন আগের সপ্তাহের তুলনায় ৯৪৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা বেড়েছে। তবে দৈনিক গড় লেনদেন ৪৭৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৮৩৪ কোটি টাকায় ওঠে এসেছে। এর কারণ বিগত সপ্তাহে ৪ কার্যদিবস লেনদেন হলেও আগের সপ্তাহে ৫ কার্যদিবস লেনদেন হয়।
ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট তিন হাজার ৩৩৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে মোট দুই হাজার ৩৯৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল।
সপ্তাহটিতে ডিএসইর প্রধান সূচক ৫৯০.৮৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫,৯২৪.৮১ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১০৯.৫৩ পয়েন্ট বেড়ে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২৩১.৮৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১,২৭৪.৯১ পয়েন্টে এবং ২,১৩২.৭৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই এসএমই সূচক ৭৪.৪৭ পয়েন্ট কমে ১,৪৪৬.২৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহটিতে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৪১৩টি কোম্পানি, মিউচু্যয়াল ফান্ড ও বন্ড। এরমধ্যে ৩৩৯টির দর বেড়েছে, ৪৭টির দর কমেছে, ১১টির দর অপরিবর্তিত ছিল এবং ১৬টির লেনদেন হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সোমবার শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর মঙ্গলবার থেকেই লেনদেন শুরু হয় দেশের দুই পুঁজিবাজারে। প্রথম দিন থেকেই রেকর্ড উত্থান শুরু হয়।
২০১০ সালের কেলেঙ্কারি ও বড় ধসের পর থেকে গত ১৪ বছরে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি পুঁজিবাজার। এর মধ্যে ২০১৮ সালে কিছুদিন বাজারে গতি ফিরলেও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।
নীতিনির্ধারকদের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত, দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্তি, ভালো মানের শেয়ারের অভাব, শেয়ার নিয়ে কারসাজির মতো ঘটনায় পুঁজিবাজারে কমতে থাকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ। ফলে শুধু কারসাজি চক্র বাজারকে খুব বেশি দিন চাঙা রাখতে ব্যর্থ হয়।
সরকার পতনের পরের দিন মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান সূচক বৃদ্ধি পায় ১৯৭ পয়েন্ট। বুধবার বৃদ্ধি পায় আরও ১৯২ পয়েন্ট। বৃহস্পতিবার সূচক বাড়ে ৩০৬ পয়েন্ট।
অনেক বিনিয়োগকারীই দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা ও নতুন সরকার কবে হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় প্রথম দুই দিন বিনিয়োগে আসেনি। ফলে সূচক বাড়লেও বড় অঙ্কের লেনদেন হয়নি ডিএসইতে। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হবে। এমন সংবাদে বেশির ভাগ ভালো মানের শেয়ার সকাল থেকেই ছিল বিক্রেতাশূন্য। দিন শেষে ডিএসইর সাধারণ সূচক বৃদ্ধি পায় ৩০৬ পয়েন্ট, যা স্মরণকালের রেকর্ড।
এদিন শুধু সূচক বৃদ্ধিই নয়, লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৬০৬ কোটি টাকা, যা তার আগের দিনের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। আগের দিন ডিএসইতে মোট লেনদেন ছিল ৭৭৫ কোটি টাকা। যেন নতুন প্রাণ ফিরে পায় ডিএসই।
বিগত সপ্তাহে ডিএসইর মূলধনও বাড়ে উলেস্নখযোগ্য হারে। গত মঙ্গলবার সকালে ৬ লাখ ৪৫ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকার বাজার মূলধন নিয়ে লেনদেন শুরু হয়, যা বৃহস্পতিবার দিন শেষে দাঁড়ায় সাত লাখ ৩ হাজার ৯১৩ কোটি টাকায়। অর্থাৎ তিন দিনে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৫৮ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনের নেতৃত্বে উঠে এসেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ৩৪ কোটি ৭২ লাখ ৭০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৪.১৬ শতাংশ।
লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে স্কয়ার ফার্মা। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ২৮ কোটি ৪৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৩.৪১ শতাংশ।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিটি ব্যাংক পিএলসি। সপ্তাহজুড়ে ব্যাংকটির প্রতিদিন গড়ে ২৫ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৩.০৮ শতাংশ।
এছাড়া প্রতিদিন গড় লেনদেনে সাপ্তাহিক শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউনিলিভার কনজু্যমারের ২৪ কোটি ৬৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের ২২ কোটি ৪৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা, টেকনো ড্রাগসের ২০ কোটি ৮৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা, উত্তরা ব্যাংকের ১৮ কোটি ২২ লাখ ১০ হাজার টাকা, সি পার্ল হোটেলের ১৫ কোটি ৩৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৫ কোটি ২৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং রবি আজিয়াটার ১২ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে ঢাকা ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩০.৫৯ শতাংশ। সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে গ্রামীণ ওয়ান : স্কিম দুই'র ৩০.৪৩ শতাংশ, ইসলামিক ফাইন্যান্সের ২৯.৪১ শতাংশ, জেনারেশন নেক্সট'র ২৯.৪১ শতাংশ, একমি পেস্টিসাইডসের ২৯.২২ শতাংশ, মুন্নু সিরামিকের ২৯.০৭ শতাংশ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের ২৯.০৫ শতাংশ, ঢাকা ইন্সু্যরেন্সের ২৯.০৪ শতাংশ, এসিআই লিমিটেডের ২৯.০৩ শতাংশ এবং দ্য একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের ২৯.০২ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।
সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে জেমিনি সি ফুড লিমিটেডের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১১.৪৩ শতাংশ কমেছে। সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষ তালিকায় স্থান পাওয়া অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মার ১১.২৫ শতাংশ, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ১১.২২ শতাংশ, শাইনপুকুর সিরামিকসের ১০.৮৭ শতাংশ, বেক্সিমকো গ্রিন সুকুকের ১০.৭৪ শতাংশ, গেস্নাবাল হেভি কেমিক্যালসের ১০.৬৭ শতাংশ, টেকনো ড্রাগসের ৯.৭৬ শতাংশ, সি পার্ল হোটেলের ৯.৪৮ শতাংশ, এস. আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলসের ৯.৪২ এবং সালভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ৮.৭৫ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে।