বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১
সাপ্তাহিক শেয়ারবাজার

ডিএসইতে কমেছে সব ধরনের সূচক

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
ডিএসইতে কমেছে সব ধরনের সূচক

বিদায়ী সপ্তাহে অর্থাৎ ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সব ধরনের সূচক কমেছে। পাশাপাশি কমেছে দৈনিক গড় লেনদেনও। কোটা আন্দোলনের জেরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে বলে জানিয়েছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।

বিগত সপ্তাহে লেনদেন আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৭৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা বেড়েছে। তবে দৈনিক গড় লেনদেন ৫৫৫ কোটি টাকা থেকে কমে ৪৭৮ কোটি টাকায় এসেছে। এর কারণ বিগত সপ্তাহে ৫ কার্যদিবস লেনদেন হলেও আগের সপ্তাহে চার কার্যদিবস লেনদেন হয়। অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে লেনদেন কমেছে। শুধু এক কার্যদিবস লেনদেন বেশি হওয়ায় বিগত সপ্তাহ থেকে বেশি লেনদেন দেখা যাচ্ছে।

ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট দুই হাজার ৩৯৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে মোট দুই হাজার ২২০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল।

সপ্তাহটিতে ডিএসইর প্রধান সূচক ৭৯.৭১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫,৩৩৩.৯৪ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ্‌ সূচক ১৭.৯৯ পয়েন্ট কমে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৩১.৯২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১,১৬৫.৩৮ পয়েন্টে এবং ১,৯০০.৮৫ পয়েন্টে। এবং ডিএসই এসএমই সূচক ১.৯৪ পয়েন্ট কমে ১,৫২০.৭২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহটিতে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৪১৩টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড। এরমধ্যে ৪৯টির দর বেড়েছে, ৩২৭টির দর কমেছে, ২১টির দর অপরিবর্তিত ছিল এবং ১৬টির লেনদেন হয়নি।

সপ্তাহের ব্যবধানে ১৯ খাতের বিনিয়োগকারীরা লোকসানে রয়েছে। আলোচ্য সময়ে শুধুমাত্র টেলিকমিউনিকেশন খাতে ০.১০ শতাংশ দর বেড়েছে। আলোচ্য সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে সিরামিক খাতে। বিদায়ী সপ্তাহে এখাতে দর কমেছে ৫.১০ শতাংশ। দর কমার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কাগজ ও প্রকাশনা খাত। এখাতে দর কমেছে ৪.৫০ শতাংশ। একই সময়ে ৪.৪০ শতাংশ দর কমে তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে সেবা ও আবাসন খাত।

বিদায়ী সপ্তাহে লোকসান হওয়া অন্যান্য খাতের মধ্যে- তথ্য প্রযুক্তি খাতে ৩.৬০ শতাংশ, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ৩.৫০ শতাংশ, আর্থিক খাতে ৩.৫০ শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ৩.৩০ শতাংশ, বস্ত্র খাতে ৩.১০ শতাংশ, পাট খাতে ৩.১০ শতাংশ, প্রকৌশল খাতে ২.৭০ শতাংশ, চামড়া খাতে ২.৬০ শতাংশ, লাইফ ইনসু্যরেন্স খাতে ২.৩০ শতাংশ, বিবিধ খাতে ১.০০ শতাংশ, সিমেন্ট খাতে ০.৯০ শতাংশ, ব্যাংক খাতে ০.৯০ শতাংশ, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ০.৮৫০ শতাংশ, জেনারেল ইনসু্যরেন্স খাতে ০.৬০ শতাংশ, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ০.০২ শতাংশ এবং বিদু্যৎ ও জ্বালানি খাতে ০.০২ শতাংশ দর কমেছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর পিই রেশিও কমেছে ৫.৯৮ শতাংশ বা ০.৬৪ পয়েন্ট, যার ফলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকি আরও কমেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সিংহভাগ শেয়ার দীর্ঘদিন যাবত পতনের বৃত্তে থেকে তলানিতে এসে নেমেছে। যার কারণে তালিকাভুক্ত সিংহভাগ শেয়ারে বিনিয়োগ এমনিতেই ঝুঁকিমুক্ত। তারপর সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও কমায় ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ অবস্থা আরও অবারিত হয়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর সার্বিক পিই রেশিও অবস্থান করছে ১০.০৬ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১০.৭০ পয়েন্টে।

খাতভিত্তিক হিসাবে পিই রেশিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যাংক খাতে পিই রেশিও ৫.৯ পয়েন্ট, সিমেন্ট খাতে ১২.৪ পয়েন্ট, সিরামিকস খাতে ১১৯ পয়েন্ট, প্রকৌশল খাতে ১৬.১ পয়েন্ট, আর্থিক খাতে ৩১.৭ পয়েন্ট, খাদ্য খাতে ১৪.৩ পয়েন্ট, বিদু্যৎ ও জ্বালানি খাতে ৯.৬ পয়েন্ট, সাধারণ বিমা খাতে ১৩.৭ পয়েন্ট, আইটি খাতে ১৭.৫ পয়েন্ট, পাট খাতে ১৬.৭ পয়েন্ট, বিবিধ খাতে ৩২.৮ পয়েন্ট, মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ১১১.৯ পয়েন্ট, কাগজ খাতে ২১.৪ পয়েন্ট, ওষুধ খাতে ১৩.১ পয়েন্ট, সেবা-আবাসন খাতে ১৬.৪ পয়েন্ট, ট্যানারি খাতে ২৩.৩ পয়েন্ট, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ১৪.৪ পয়েন্ট, টেলিকমিউনিকেশন খাতে ৯.৭ পয়েন্ট ও বস্ত্র খাতে ১৭.৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সপ্তাটিতে ডিএসইতে লেনদেনের নেতৃত্বে উঠে এসেছে টেকনো ড্রাগস লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ৩২ কোটি ৪৪ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৬.৭৮ শতাংশ।

লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ২৪ কোটি ৩৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৫.০৯ শতাংশ।

তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ১৬ কোটি ৮৭ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৩.৫২ শতাংশ।

এছাড়া প্রতিদিন গড় লেনদেনে সাপ্তাহিক শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ১৫ কোটি ৮৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা, এনআরবি ব্যাংকের ১৩ কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, লাভেলো আইসক্রিমের ১২ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, সি পার্ল হোটেলের ১০ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা, স্কয়ার ফার্মার ১০ কোটি ৪৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ইউনিলিভার কনজিউমারের ৯ কোটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং ফারইস্ট নিটিং এন্ড ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৮ কোটি ৯৫ লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে টেকনো ড্রাগস লিমিটেডের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৮১.৪৩ শতাংশ। সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে অগ্নি সিস্টেমসের ১৬.৬৭ শতাংশ, এনআরবি ব্যাংকের ১১.২৯ শতাংশ, লিবরা ইনফিউশনসের ৯.৬২ শতাংশ, ওয়ান ব্যাংক পিএলসির ৯.৫৯ শতাংশ, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের ৯.৩৯ শতাংশ, হাইডেলবার্গ ম্যাটেরিয়ালসের ৯.২০ শতাংশ, ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ৭.৮৩ শতাংশ, সানলাইফ ইনসু্যরেন্সের ৬.৭৯ শতাংশ এবং প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ৬.৭৮ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।

সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনসু্যরেন্স লিমিটেডের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৯.৬০ শতাংশ কমেছে। সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষ তালিকায় স্থান পাওয়া অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল টি কোম্পানির ১৪.৫৭ শতাংশ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনসু্যরেন্সের ১২.৯০ শতাংশ, আমান ফিডের ১১.৭৮ শতাংশ, জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের ১১.৬৭ শতাংশ, সি পার্ল রিসোর্টের ১১.৬৫ শতাংশ, আলহাজ টেক্সটাইলের ১১.১৭ শতাংশ, মিথুন নিটিংয়ের ১১.০৭ শতাংশ, সিএপিএম বিডবিএল মিউচুয়াল ফান্ডের ১০.৯৬ শতাংশ এবং ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ১০.৮৭ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে