মাছের দাম কমেছে, স্বস্তি সবজিতেও

প্রকাশ | ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
বাজারে মাছের সরবরাহ ভালো হলেও দাম চড়া। ছবিটি শুক্রবার পলাশী বাজার থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা
কোরবানির ঈদের পর থেকেই চড়ছিল মাছের বাজার; কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম আরও বেড়েছিল। একইসঙ্গে বেশ কিছু পণ্যের দামেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। তবে সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ায় মাছ ও সব ধরনের সবজির দাম কমে এসেছে। শুক্রবার কারওয়ান বাজার ও বিজয় সরণির বনলতা কাঁচাবাজার ঘুরে এই তথ্য মিলেছে। উত্তাপ কমেছে মাছের বাজারে: কোরবানি ঈদের পর পাঙাস ছাড়া কোনো মাছই ৩০০ টাকার নিচে মিলছিল না। কোটা আন্দোলনের সময়ে সরবরাহ ঘাটতির কথা বলে আরও বেশি দাম হাঁকা হচ্ছিল। তবে শুক্রবারের বাজারে কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা কমে মিলছে মাছ। কারওয়ান বাজারে রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে মান ও আকারভেদে ২৬০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি, পাবদা ৩২০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ টাকা, পাঙ্গাস আকারভেদে ১৭০ থেকে ২০০ টাকায়। আর প্রতি কেজি ইলিশ কিনতে গুনতে হচ্ছে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। সরবরাহ ভালো সবজির: আগের সপ্তাহের তুলনায় প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে কমেছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। বিক্রেতারা দেশি শসা বিক্রি করছেন ৬০ টাকা কেজি দরে, হাইব্রিড শসা ৮০ টাকায়, বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, টমেটো ১৪০ টাকায়, গাজর ১৬০ টাকায়, পটল, চিচিঙ্গা ও ঢেঁরস ৪০ টাকায়, বরবটি ও করলা ৮০ টাকায়, কাকরোল ৬০ টাকায় এবং ধুন্দল ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে সবজির দাম আরও কমানোর দাবি জানাচ্ছেন ক্রেতারা। তাদের একজন সুমন আহমেদ বলেন, 'এখন আগের চেয়ে দাম কিছুটা কমেছে ঠিকই, কিন্তু এটাও উচ্চমূল্য। আরও কমানো দরকার।' কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আল আমিন বলেন, 'কয়েকদিনের তুলনায় দাম আজ একটু কমছে। বাজারে সরবরাহ ভাল আছে। কিন্তু এখন যেহেতু বৃষ্টি শুরু হইছে, তাই দু-একদিনের ভেতরে দেখা যাইবো দাম আবার বাইড়া গেছে।' বাজারে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। রসুন ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, আদা ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়, পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় এবং আলু ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিম-মুরগির দাম স্থিতিশীল: কোটা আন্দোলন ঘিরে সরবরাহের ঘাটতির কারণে কয়েকদিন চড়েছিল মুরগি ও ডিমের দাম। এর বাইরে ঈদের পর থেকে এখন পর্যন্ত এই দুই পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। বাজারে প্রতি হালি লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, সাদা ডিম ৪৬ টাকায় এবং হাঁসের ডিম ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়, সোনালি ২৮০ টাকায় এবং দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৩০ টাকা কেজি দরে। কারওয়ান বাজারে দেশি মুরগির আড়ত স্বদেশ মুরগির বাবুল বলেন, 'ময়মনসিংহ, সৈয়দপুর রংপুর ও দিনাজপুর থেকে আমার এখানে দেশি মুরগি আসে। তবে দেশি মুরগিগুলো ফার্ম থেকে আনা হয় নাকি বাড়ি বাড়ি ঘুরে কিনে আনে তা জানি না।' বাজারে ক্রেতারা গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজি দরে কিনছেন। মধ্যবাড্ডা এলাকার গরুর মাংস বিক্রেতা শান্ত ইসলাম বলেন, এই সময়ে গরুর মাংসের চাহিদা ভালোই থাকে। যে কারণে দামটা মোটামুটি ৮০০ টাকার মধ্যেই আটকে থাকে। আজকের (শুক্রবার) বাজারে গুরুর মাংস বিক্রি করছি ৭৮০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকা। কলিজা বিক্রি করছি ৭৮০ টাকা করেই। এছাড়াও গরুর পায়া ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত জোড়া। এদিকে মুরগির মাংস বিক্রেতা মনসুর আলী বলেন, 'গত কয়েকদিনে ব্রয়লার মুরগির দামটাও একটু কম। ১৭০ টাকা কেজি সর্বশেষ মাসখানেক আগে ছিল, এরপর আবার দামটা বেড়ে যায়। গত সপ্তাহেও ২০০ টাকার বেশি ছিল, আজ ১৭০ করে বিক্রি করছি।' এদিকে, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সব ধরনের পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। বাজারে খাদ্যপণ্যের দামও কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছিল। যদিও কারফিউ জারি ও সেনাবাহিনী নামানোর পর পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কিছুটা স্বাভাবিক মনে হলেও এখনো মানুষের মনে আতঙ্ক কাটেনি। পাড়া-মহলস্না, হাট-বাজারে আগের থমথমে পরিস্থিতির রেশ আছে। বাজারে মানুষ কম আসছে। তাতে বিক্রি কমেছে। তবে তুলনামূলক পণ্যের সরবরাহ বাড়ায় জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কমেছে। তিনি বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মাংসের চাহিদাটা একটু বেড়ে যায়, বাজারে যদি সেই পরিমাণে সরবরাহ না থাকে, তাহলেই দাম বেড়ে যায়, যেখানে আমাদের কিছুই করার থাকে না। তবে আশা করছি এখন মোটামুটি ১৭০-১৮০ টাকার মধ্যেই থাকবে।