দেশের শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন চলছেই। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ঢালাও দরপতন হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া ৮৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমছে। এতে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মতো অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) ঢালাও দরপতন হয়েছে। দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১৮ গুণ বেশি প্রতিষ্ঠান। ফলে এই বাজারটিতেও সূচকের বড় পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা তিন কর্যদিবস শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হলো। সরকারি চাকরিতে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে টানা তিন কার্যদিবস শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে গত সপ্তাহের বুধবার থেকে আবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়। তবে আতঙ্কে মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে বুধবার শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। সেই সঙ্গে লেনদেন কমে ২০০ কোটি টাকার নিচে নেমে যায়। অবশ্য পরের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ারবাজার। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়। সেই সঙ্গে বাড়ে লেনদেনের গতি। আর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়লেও অন্যান্য খাতের সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে। ফলে মূল্যসূচকেরও পতন হয়। পরের কার্যদিবস সোমবারও শেয়ারবাজারে বড় দরতপন হয়। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। এতে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। লেনদেনের সময়ে গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দরপতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। ঢালাওভাবে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের দরপতন হওয়ায় সূচকের বড় পতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ২৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৪০টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৬ শতাংশের। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬০ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ২৬৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৫১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২০ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৮৮১ পয়েন্টে নেমে গেছে। সূচকের পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের গতি। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৩২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৫০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সেই হিসাবে লেনদেন কমেছে ১৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে টেকনো ড্রাগসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৮৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশনের ৩০ কোটি ৫২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৪ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে অগ্নি সিস্টেম। এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, এনআরবি ব্যাংক, স্যালভো কেমিকেল, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বিচ হ্যাচারি, লাভেলো আইসক্রিম এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক। অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৩২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৫টির এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২০ কোটি ৮১ লাখ টাকা।