মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে দেশের শেয়ারবাজারে আবার দরপতন হয়েছে। রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৬৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এরপরও মূল্যসূচকের খুব বড় পতন হয়নি। এর কারণ পতনের বাজারেও অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মতো অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) বেশির ভাগ ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে। ফলে দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় দ্বিগুণ প্রতিষ্ঠান থাকার পরও সূচকের বড় পতন হয়নি।
সরকারি চাকরিতে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে টানা তিন কার্যদিবস শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে গত সপ্তাহের বুধবার থেকে আবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়। তবে আতঙ্কে মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে বুধবার শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। সেই সঙ্গে লেনদেন কমে দুশ কোটি টাকার নিচে নেমে যায়।
অবশ্য পরের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ারবাজার। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়। সেই সঙ্গে বাড়ে লেনদেনের গতি।
এ পরিস্থিতিতে রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ২৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
তবে প্রথম আধাঘণ্টার লেনদেন পার হতেই বদলে যেতে থাকে বাজারের চিত্র। দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে যায়। ফলে দেখতে দেখতে সূচকও ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এই অবস্থা অব্যাহত থাকে। অবশ্য অন্য খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমলেও বিপরীত চিত্র দেখা যায় ব্যাংকের ক্ষেত্রে। দাম কমার বদলে বেশির ভাগ ব্যাংক দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৮৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২১৬টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৪৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অন্যদিকে ২০টি ব্যাংকের দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ৬টির।
এতে ডিএসই'র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স ২৯ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩৮৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৭৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯২১ পয়েন্টে নেমে গেছে।
সূচকের পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের গতি। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৮৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৯৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে অগ্নি সিস্টেমের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এনআরবি ব্যাংকের ১৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফারইস্ট নিটিং।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- মিডল্যান্ড ব্যাংক, লাভেলো আইসক্রিম, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ওরিয়ন ইনফিউশন, গেস্নাবাল ইসলামী ব্যাংক এবং আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৭টির এবং ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।