চট্টগ্রাম বন্দরে জমে আছে ৪০ হাজার কনটেইনার

প্রকাশ | ২৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

খোরশেদুল আলম শামীম, চট্টগ্রাম
কোটা আন্দোলন ঘিরে কারফিউর কারণে মহাসড়কে পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ হওয়া এবং ইন্টারনেট সেবা না থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর ও অফডকে থাকা আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে গেছে। পণ্য খালাস শুরু হলেও কমেনি কন্টইেনারের এই জট। চট্টগ্রাম বন্দরে জমে আছে ৪০ হাজার কন্টেইনার। গত বুধবার ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হওয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কাজে গতি ফিরেছে। তবে স্বাভাবিক হয়নি আমদানি-রপ্তানির শুল্কায়ন প্রক্রিয়া। একইভাবে বন্দর ইয়ার্ড থেকে কনটেইনার ডেলিভারি কার্যক্রমে পুরোপুরি গতি আসেনি। কারণ, বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সব এলাকায় ইন্টারনেট স্বাভাবিক হয়নি। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো পুরোপুরি সেবা দিতে পারছে না। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার ইমাম গাজ্জালী বলেন, ব্যবসায়ীরা এখন আমদানি ও রপ্তানির সব পণ্য খালাস করতে পারছেন। শুক্রবারও পচনশীল মাল শুল্কায়ন করেছি। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হওয়ায় সব কার্যক্রম স্বাভাবিক হচ্ছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আকতার হোসেন বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাস্টম হাউসে সমস্যা হচ্ছে না। সমস্যা হলো- আমরা শিপিং এজেন্টদের থেকে ডিউ না পাওয়ায় পণ্য খালাস করতে পারছি না। তারা নাকি ইন্টারনেট পাচ্ছে না। এ বিষয়ে ইমাম গাজ্জালী বলেন, কারও পে-অর্ডার ও চালান না থাকলে আমরা অঙ্গীকারনামা নিয়ে পণ্য খালাস করতে দিচ্ছি। অন্যদিকে চট্টগ্রামের ১৯টি অফডকে রপ্তানি পণ্যবাহী প্রায় পাঁচ হাজার কন্টেইনার জমে আছে। এর পাশাপাশি তৈরি পোশাক কারখানাগুলো থেকে নতুন কোনো রপ্তানি পণ্য গত কয়েক দিনে অফডকে আসেনি। অফডকগুলো থেকে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার শিল্প-কারখানার পাঠানোর কাজও আটকে ছিল। বন্দর চেয়ারম্যান কমোডর এম সোহায়েল বলেন, বন্দরের সব জেটিতে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠা-নামার কাজ স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু ডেলিভারিতে সমস্যা হয়ে যায়। সে কারণে বন্দরে থাকা কন্টেইনারের সংখ্যা বেড়ে গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ায় এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাস্টমসে কিছু পণ্যের শুল্কায়ন ম্যানুয়ালি করতে শুরু করায় অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু পুরো স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে আরও এক সপ্তাহের মতো সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, সহিংসতায় ৫-৬ দিন বন্ধ থাকায় ডেলিভারি কম হওয়ায় কনটেইনার জমে গিয়েছিল। এটা আরও বাড়লে হয়ত সমস্যা হতো। কিন্তু মহাসড়কে যানবাহন চলতে শুরু করায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বন্দরের ভেতরে সব কার্যক্রম, জাহাজ থেকে কনটেইনার লোড-আনলোড, জাহাজের আসা-যাওয়া সবই স্বাভাবিক ছিল এবং আছে। তবে ইন্টারনেট ডাউন থাকায় টার্মিনাল অপারেটিং ম্যানুয়ালি করতে হচ্ছে। এতে কর্মীদের বেগ পেতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, স্বাভাবিক সময় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টিইইউস ডেলিভারি হতো বন্দর থেকে। ৫৩ হাজার টিইইউস ধারণক্ষমতার বিপরীতে বর্তমানে বন্দরে কনটেইনার রয়েছে ৪০ হাজার ২৭২ টিইইউস। জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে এক দশক আগে পণ্যের শুল্কায়নে অনলাইনভিত্তিক অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড ব্যবস্থা চালু হয়। এ ব্যবস্থায় ঘরে বসে ব্যবসায়ীরা অনলাইনে আমদানি-রপ্তানির নথিপত্র জমা দিতেন। এরপর শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শুরু করতেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। কোটা আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নতুন কোনো চালানের নথি জমা দিতে পারেননি ব্যবহারকারীরা। এতে নতুন চালানের শুল্কায়নও বন্ধ ছিল। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সক্রিয় করা হয়। ব্যবসায়ীরা যাতে এই ব্যবস্থায় শুল্কায়নের জন্য নথিপত্র জমা দিতে পারেন, সে জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে চারটি কম্পিউটারে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ম্যানুয়ালি শুল্কায়ন করার সুযোগ ছিল। বিকল্প ব্যবস্থায় কাস্টম হাউসে আমদানি-রপ্তানির চালানের নথি তেমন একটা জমা হয়নি। প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলমান শাটডাউনে মোট বিএল জমা পড়েছিল মাত্র তিন হাজার ৮২৩টি। আর গত শুক্রবার দুপুর ১টা পর্যন্ত এক হাজার ৪৮৩টি বিল জমা পড়েছে, যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক কম। কাস্টমস কর্মকর্তারা বলেন, স্বাভাবিক সময় কাস্টম হাউসে প্রতিদিন গড়ে ছয় হাজার রপ্তানি চালান ও এক হাজার দুইশ'র মতো আমদানি চালান শুল্কায়ন হয়। যদিও এখন ইন্টারনেট সেবা চালু হয়েছে। আশা করছি, স্বাভাবিক সময়ের মতো কার্যক্রম চলবে।