দেশে এনজিওগুলোর ঋণ বিতরণ ও আদায় বেড়েছে

২০২৩ সালে শক্তি ফাউন্ডেশন মোট ঋণ বিতরণ করেছে ৩ হাজার ৮৩৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় করেছে ৩ হাজার ৪০২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আলোচ্য বছরে নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট সুবিধাভোগী বা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ৪ লাখ ৪২ হাজার ১০৩ জন

প্রকাশ | ২৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
ঋণ আদায়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পিছিয়ে পড়লেও বেসরকারি সংস্থাগুলো (এনজিও) ঋণ আদায়ে এগিয়ে রয়েছে। তাদের বিতরণকৃত ঋণের ৯৫ শতাংশই আদায় হয়েছে। পাশাপাশি এসব সংস্থাগুলোর ঋণ বিতরণের হারও বেড়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন চিত্র। সূত্র জানায়, ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে ২০০৬ সালে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলতি বছরের ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত মোট ৮৯২টি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার সনদ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে একই সময় পর্যন্ত ১৫৫টি প্রতিষ্ঠানের সনদ বাতিল করা হয়েছে। এ অবস্থায় বর্তমানে দেশে ৭৩৭টি প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধাভোগী বা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা প্রায় চার কোটির অধিক এবং এদের ৯০ শতাংশই নারী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ২০২৩ সালে এক বছরে দেশের ৭টি বড় এনজিও ঋণ বিতরণ করেছে এক লাখ ৩০ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। শুধু ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রেই নয়, তাদের ঋণ আদায়ের হারও ঈর্ষণীয় পর্যায়ে রয়েছে। সংস্থাগুলো ঋণ আদায়ের হার ৯৫ শতাংশেরও বেশি। এ সময় তারা ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে আদায় করেছে এক লাখ ২৪ হাজার ২৪ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী এই ৭টি প্রধান এনজিওর মধ্যে রয়েছে- ব্র্যাক, আশা, বু্যরো বাংলাদেশ, টিএমএসএস, শক্তি ফাউন্ডেশন, প্রশিকা ও কারিতাস। এর মধ্যে গত ২০২৩ সালের পঞ্জিকা বছরে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর পর্যন্ত) ব্র্যাক মোট ৬৮ হাজার ৬২১ কোটি ৪ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এর বিপরীতে একই বছরে ঋণ আদায় করেছে ৬৪ হাজার ১৩২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আলোচ্য বছরে নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট সুবিধাভোগী বা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ৮৮ লাখ ৮ হাজার ৩৩৯ জন। একই সময় আশা মোট ঋণ বিতরণ করেছে ৩১ হাজার ৬৬৫ কোটি চার লাখ টাকা। আলোচ্য বছরে নারী-পুরুষসহ মোট সুবিধাভোগী বা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ৭০ লাখ ৯৭ হাজার ৭৩১ জন। বু্যরো বাংলাদেশ মোট ঋণ বিতরণ করেছে ১১ হাজার ৩২০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় করেছে ৯ হাজার ৩৭৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এ সময় নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট সুবিধাভোগী বা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ২৫ লাখ ৩৩ হাজার ৭৬৯ জন। একই বছরে টিএমএসএস মোট ঋণ বিতরণ করেছে ৮ হাজার ৮৫৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় করেছে ৮ হাজার ৯৬ কোটি ৩ লাখ টাকা। নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট সুবিধাভোগী বা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ১৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭১ জন। ২০২৩ সালে শক্তি ফাউন্ডেশন মোট ঋণ বিতরণ করেছে ৩ হাজার ৮৩৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় করেছে ৩ হাজার ৪০২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আলোচ্য বছরে নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট সুবিধাভোগী বা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ৪ লাখ ৪২ হাজার ১০৩ জন। একই বছর প্রশিকা মোট ঋণ বিতরণ করেছে ২ হাজার ২৭৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় করেছে ২ হাজার ১৬২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আলোচ্য বছরে নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট সুবিধাভোগী বা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৪০৭ জন। কারিতাস মোট ঋণ বিতরণ করেছে ৯৩৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় করেছে ৮৮০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আলোচ্য বছরে নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট সুবিধাভোগী বা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ১১ হাজার ৫৩৬ জন। এনজিওগুলো ঋণ আদায়ের সফলতা নিয়ে অনেক সমালোচনাও রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে কোনো কোনো এনজিও ঋণ আদায়ের জন্য জোর-জবরদস্তির আশ্রয় নিয়ে থাকে। একইসঙ্গে তাদের ঋণের সুদের হারও অনেক বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ২৭ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে।