রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

পণ্য খালাসের চাপে চট্টগ্রাম বন্দরে জট

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ২৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রাম বন্দরে থরে থরে সাজানো পণ্যবাহী কনটেইনার -সংগৃহীত

ইন্টারনেট না থাকায় দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে যে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে, তা কাটতে শুরু করেছে। পণ্য রপ্তানি পুরোদমে শুরু হয়েছে। আবার বন্দর থেকে আমদানি পণ্য খালাসের চাপও বেড়েছে।

গত কয়েকদিনের অচলাবস্থার কারণে বন্দরের ভেতরে আমদানি পণ্যের স্তূপ বেড়ে গিয়েছিল। খালাস না হওয়ায় প্রায় ৪১ হাজার কনটেইনারের স্তূপ জমে বন্দরে। পণ্য খালাস শুরু হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে এ সংখ্যা ৪০ হাজারের নিচে নেমেছে। পণ্য খালাসের চাপের কারণে বন্দরের ভেতরে যান চলাচলে জট লেগে গেছে। এই চাপ স্বাভাবিক হতে কিছুদিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্মকর্তারা।

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ১৯ জুলাই রাত থেকে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। এতে বন্ধ হয়ে যায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও। কারণ অনলাইনে কোনো পণ্য চালানের শুল্কায়নের জন্য কোনো নথিপত্র জমা দেওয়া যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার বিকল্প ব্যবস্থায় চট্টগ্রাম কাস্টমস আমদানি-রপ্তানির শুল্কায়ন কার্যক্রম শুরু করে। বুধবার সীমিত পরিসরে ব্রন্ডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হয়। তাতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে শুরু করে। গতকাল পুরোপুরি সচল হয় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়, তার ৯৫ শতাংশই শুল্কায়ন করে চট্টগ্রাম কাস্টমস। চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী বুধবার ৮ হাজার ১৫৩টি আমদানি-রপ্তানি চালান শুল্কায়ন হয়েছে। শুল্কায়নের জন্য অনলাইনে নথি জমা দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ৩৪৫টি চালানের। গতকাল দুপুর পর্যন্ত অনলাইনে আমদানি-রপ্তানির নথি জমা হয়েছে ৪ হাজার ২০০টির। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এ সংখ্যা বেশি।

কাস্টমস শুল্কায়নের পরই রপ্তানি পণ্য ডিপো থেকে এনে বন্দর দিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। আবার আমদানি পণ্যের শুল্ক কর পরিশোধ করে বন্দর থেকে খালাস করেন ব্যবসায়ীরা। বুধবার যেসব আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন হয়েছে, সেগুলো খালাস নিতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বন্দরে জট লেগে যায়।

এ বিষয়ে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৩ হাজার আমদানি পণ্যের কনটেইনার খালাস হয়েছে। ডিপোতে স্থানান্তর হয়েছে পাঁচ শতাধিক কনটেইনার। গতকালও পণ্য খালাসের চাপ ছিল। পণ্য খালাসের চাপে বন্দরে গাড়ির জট তৈরি হলেও কিছুদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

মাশুল ছাড়ে বিবেচনার আশ্বাস প্রতিমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে বন্দর চত্বরে নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী শ্রমিকদের এসব খাদ্য সহায়তা তুলে দেন। এ সময় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।

কোটা সংস্কার নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা পণ্য খালাস করতে না পারলেও কনটেইনার রাখার বাড়তি ভাড়া দিতে হবে। এ পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত জানতে চান সাংবাদিকরা। এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনার সময় পণ্য খালাস করতে না পারায় ৫০০ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে পণ্য খালাস করতে না পারার সঠিক তথ্যপ্রমাণ দিলে তা বিবেচনা করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছুই নেই বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা গত পাঁচ-ছয় দিন বন্দর থেকে কোনো পণ্য খালাস করতে পারেননি। জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানোর চার দিন পর থেকে ভাড়া গুনতে হয় ব্যবসায়ীদের। প্রথম ৭ দিনের জন্য প্রতিদিন ৬ ডলার, এরপর ১১ দিনের জন্য প্রতিদিন ১২ ডলার এবং পরবর্তী সময়ের জন্য প্রতিদিন ২৪ ডলার ভাড়া দিতে হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে