রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

পাইকারি বাজারে চিনির দাম ঊর্ধ্বমুখী

কয়েক দিন আগেও পাইকারি বাজারে চিনির দাম ছিল বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ৫ হাজার ৯৮০ থেকে ৬ হাজার টাকা। কয়েক দিনের ব্যবধানে তা বেড়ে ৬ হাজার ২৫০ থেকে ৬ হাজার ২৭০ টাকায় পৌঁছেছে। চিনির দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মঙ্গলবার দুপুরে। এদিন সকালে প্রতি বস্তা চিনির দাম প্রায় ১৮০-২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ২৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
পাইকারি বাজারে চিনির দাম ঊর্ধ্বমুখী

দেশে চলমান পরিস্থিতির কারণে পরিবহন সংকটে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে মিলগেট থেকে চিনি সংগ্রহ বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার প্রত্যাশায় পণ্যটির চাহিদা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজারে চিনির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি প্রায় সাড়ে ৫ টাকা।

পাইকারি ও ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, কয়েক দিন আগেও পাইকারি বাজারে চিনির দাম ছিল বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ৫ হাজার ৯৮০ থেকে ৬ হাজার টাকা। কয়েক দিনের ব্যবধানে তা বেড়ে ৬ হাজার ২৫০ থেকে ৬ হাজার ২৭০ টাকায় পৌঁছেছে। চিনির দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মঙ্গলবার দুপুরে। এদিন সকালে প্রতি বস্তা চিনির দাম প্রায় ১৮০-২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরায় প্রতি কেজি চিনির দাম ৬-৭ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ। সরবরাহ আদেশ, স্স্নিপ ও প্রস্তুত্ততিন ধরনের পদ্ধতিতে এখানে চিনি বেচাকেনা হয়। গত বৃহস্পতিবারের পর থেকে পরিবহন সংকটের কারণে দেশের মিলগুলো থেকে চিনি সংগ্রহ করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। পরবর্তী সময়ে কারফিউ জারির পর চাহিদাও কমে যায়। তবে ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্যমতে, মঙ্গলবার থেকে কারফিউ শিথিলের সময় বেশি হওয়ায় পাইকারি বাজারে ক্রেতা সমাগম বাড়ে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মিল থেকে সংগৃহীত চিনির দামও একদিনের ব্যবধানে বেশি বেড়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ চিনি ডিলার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, 'গত কয়েক দিনে সাধারণ ছুটি ও কারফিউর কারণে পরিবহন সংকট বেড়ে গিয়েছিল। তবে মঙ্গলবার থেকে হঠাৎ চিনির চাহিদা বেড়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার প্রত্যাশার পাশাপাশি গরমের তীব্রতা বেশি থাকায় চাহিদা বেড়েছে। '

ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন দেশের মিলগুলো থেকে চিনি সংগ্রহের হার কমলেও কারফিউর কারণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও খাবারের দোকান বন্ধ থাকায় চাহিদাও কম ছিল। তবে সম্প্রতি তা বেড়েছে। চট্টগ্রামে বেসরকারি চিনিকল একটি হওয়ায় সরবরাহ সংকটে দামও বেশি বেড়েছে।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সেকান্দর জানান, গৃহস্থালির চেয়ে খাদ্য উৎপাদন ও খাবার হোটেলে চিনির চাহিদা বেশি থাকে। তাছাড়া গরম বেড়ে যাওয়ায় ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার প্রত্যাশায় চিনি ক্রয় বেড়ে গেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে চিনির দাম বস্তাপ্রতি ১৫০ টাকার বেশি বেড়েছে। সারা দেশের মিলগুলো থেকে চিনি সংগ্রহ ও সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে চিনির দাম আরো বাড়তে পারে।

এদিকে, সরবরাহ সংকটের কারণে নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জেও চিনির দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বাজারে চিনি সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া চলমান কারফিউয়ের কারণে চিনিবাহী ট্রাক বাজারে ঢুকতে পারেনি। এতে চিনির দাম কেজিপ্রতি এক থেকে দেড় টাকা দাম বেড়েছে।

কোটা আন্দোলনের আগে নিতাইগঞ্জ খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে চিনি বিক্রি হয়। কিন্তু গতকাল দাম বেড়ে ১২২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২৩ টাকায় পৌঁছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে সরকারঘোষিত কারফিউয়ের কারণে চিনিবাহী ট্রাক নিতাইগঞ্জে আসতে পারেনি। ফলে আগের কার্যাদেশ দেয়া চিনি বুঝে পাননি তারা। তাছাড়া ইন্টারনেট বন্ধ থাকায়ও সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

জানা যায়, সাধারণত 'ডিমান্ড অর্ডার (ডিও)' বা 'সাপস্নাই অর্ডার (এসও)' পদ্ধতিতে কোম্পানিগুলো থেকে চিনি ক্রয় করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। চাহিদা অনুসারে কোম্পানিগুলো থেকে ক্রয়চুক্তির নথি কেনেন তারা। পরে ওই নথির ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট তারিখে চিনি সরবরাহ করে কোম্পানিগুলো। এ প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন হয়। দেশব্যাপী ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় সরবরাহ করতে পারছে না কোম্পানিগুলো।

নিতাইগঞ্জের গোপীনাথ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী দিলীপ সাহা বলেন, 'পণ্য সংকটের কারণে চিনির দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চিনির দামও আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে