রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) বৈশ্বিক বাজার সংকুচিত হয়ে পড়েছে। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিদু্যৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি পণ্যটির ওপর নির্ভরশীল দেশগুলো। এ অবস্থায় আমদানিকারক দেশগুলোর কাছে বাড়তি এলএনজির বিক্রি বাড়ানো ও বাজার স্থিতিশীল করতে কৌশল গ্রহণ করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)।
এলএনজির বৈশ্বিক বাজারের আকার জ্বালানি তেলের তুলনায় ছোট। বেশিরভাগ এলএনজিই অফ মার্কেটে কেনাবেচা হয়। বিদু্যৎ উৎপাদনে জাপানসহ আরও কিছু দেশ এর ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া ব্যয়বহুল স্থাপনা ও উচ্চ সক্ষমতা ছাড়া জ্বালানি পণ্যটি মজুত করাও দুঃসাধ্য। ফলে বছরজুড়েই এলএনজির বাজার অস্থিতিশীল থাকে।
এ সমস্যা মোকাবিলায় শিগগিরই একটি কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে আইইএ। যাদের কাজ হবে সংস্থাটির ৩১ সদস্য দেশে এলএনজির বেচাকেনা এবং প্রাক্কলিত চাহিদার তথ্য বিশ্লেষণ ও প্রচার করা। একই সঙ্গে বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সদস্য দেশগুলোকে সুপারিশ প্রদানের কাজও করবে কমিটি।
ব্রিটিশ ইন্ডাস্ট্রি গ্রম্নপ ইনস্টিটিউটের মতে, ২০২৩ সালে আইইএর সদস্যভুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও প্রধান ইউরোপীয় দেশগুলোয় বৈশ্বিক মোট এলএনজি ব্যবহারের ৬০ শতাংশ সংঘটিত হয়েছে। এক্ষেত্রে চাহিদা ও সরবরাহের ক্ষেত্রে আরও বেশি স্বচ্ছতা আনা গেলে তা এলএনজির বাজার সম্পর্কে পূর্বাভাস প্রণয়নে সাহায্য করবে। একই সঙ্গে এলএনজির দামের মাত্রাতিরিক্ত অস্থিতিশীলতা ও ক্রয় বাবদ খরচ কমিয়ে আনতেও ভূমিকা রাখবে।
অতিরিক্ত সরবরাহজনিত চ্যালেঞ্জের মধ্যে থাকা সদস্য দেশগুলোর সমস্যা নিরসনেও উদ্যোগী হয়েছে আইইএ। এক্ষেত্রে সংকটে থাকা অন্য সদস্য দেশগুলোয় জরুরি ভিত্তিতে বাড়তি এলএনজি সরবরাহে একটি পরিকাঠামো তৈরির চিন্তা করছে সংস্থাটি।
বর্তমানে অনেক ইউরোপীয় দেশ পুরনো গ্যাসক্ষেত্রের ভূগর্ভস্থ সংরক্ষণাগার ব্যবহার করে প্রাকৃতিক গ্যাস মজুত করছে। সম্ভাব্য পরিকাঠামোর আওতায় ভূগর্ভস্থ সংরক্ষণাগার আছে এমন দেশগুলোকে এলএনজি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে সরবরাহ চুক্তি করার অনুমতি দেওয়া হবে। জাপানের মতো আমদানিনির্ভর দেশগুলো এ সুবিধার উপকারভোগী হতে পারবে। সম্প্রতি জাপান সরকার আপৎকালীন সময়ের জন্য অতিরিক্ত এলএনজি মজুত করতে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করছে।
প্রাকৃতিক গ্যাস সাধারণত কয়লার চেয়ে কম কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করে। তাই যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানসহ কার্বন নিঃসরণ কমাতে চাওয়া অন্য দেশগুলোয় এ জ্বালানি পণ্যের চাহিদা বেশি। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে এলএনজির দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়। এরপর তা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়। তবে জ্বালানি পণ্যটির বর্তমান দাম গত পাঁচ বছরের গড় দামের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।
আইইএর জানুয়ারির প্রতিবেদন অনুসারে, ইউরোপীয় বেঞ্চমার্ক ডাচ টাইটেল ট্রান্সফার ফ্যাসিলিটি (টিটিএফ) মার্কেটে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ২০১৬-২০ সালের গড় দামের চেয়ে ২ দশমিক ৫ গুণ বেশি ছিল। এ সময় এশিয়ায় স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম ছিল একই সময়ের গড় দামের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।
জাপানে ২০২২ অর্থবছরে মোট বিদু্যতের ৩০ শতাংশের বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে উৎপাদন করা হয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ এ পরিমাণ ২০ শতাংশে নেমে আসতে পারে। দেশটির মোট এলএনজি আমদানির প্রায় ১০ শতাংশ সরবরাহ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। দেশ দুটির চলমান যুদ্ধের কারণে এলএনজির বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। ফলে সরবরাহ ঘাটতি ও উচ্চ দামের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে জাপান।