রপ্তানিমুখী পণ্যে নতুনত্ব আনার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

সিরামিক, পাটজাত পণ্য, হস্তশিল্প, প্রক্রিয়াজাত পণ্য-খাদ্য, হাতে তৈরি ফাইবার এবং আইসিটি খাতে রপ্তানি বাড়াতে গবেষণায় জোর দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রপ্তানি খাতে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ৭৭ রপ্তানিকারকের মাঝে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি প্রদান করছেন
গুটিকয়েক পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে রপ্তানিমুখী পণ্যে নতুনত্ব আনার এবং নতুন বাজার সৃষ্টির তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই সময়ের কূটনীতি কেবল রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কূটনীতির পথেও হাঁটতে হবে। রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে রপ্তানি খাতে অবদানের জন্য জাতীয় রপ্তানি ট্রফি ২০২১-২২ প্রদান অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'বাজার বাড়াতে হবে, রপ্তানি পণ্য বহুমুখী করতে হবে। একটা রপ্তানি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকা যায় না। কারণ, একটা পণ্যের চাহিদা চিরদিন সমানভাবে থাকে না। সেটা মাথায় রেখে আ্‌মরা কোন কোন দেশে কি রপ্তানি করতে পারি, সেভাবে আমাদের নিজেদের একটা অনুসন্ধান চালানো, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং সেই সুযোগটা তৈরি করতে হবে। আমি যখন কোনো দেশে যাই, সেখানকার অ্যাম্বাসেডরদের নিয়ে মিটিং করি।' আমাদের যেটা নির্দেশ সেটা হচ্ছে, এখনকার কূটনীতি শুধু রাজনৈতিক না, এটা হবে ইকোনমিক, বাণিজ্যিক। কোন দেশে কোন মার্কেট আছে, কোন দেশে কী চাহিদা আছে, সেটা খুঁজে বের করা। তাদের কাছ থেকে আমরা কোনো পণ্য সস্তায় কিনতে পারি, তাদের কাছে আমরা কোনো পণ্য রপ্তানি করতে পারি- সেগুলো দেখা। এখন আমাদের ডিপেস্নামেসি হচ্ছে ইকোনমিক ডিপেস্নামেসি। সিরামিক, পাটজাত পণ্য, হস্তশিল্প, প্রক্রিয়াজাত পণ্য-খাদ্য, হাতে তৈরি ফাইবার, এবং আইসিটি খাতে রপ্তানি বাড়াতে গবেষণায় জোর দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'এত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও আমরা যে অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, এতে ব্যবসায়ী মহলের সহযোগিতা দরকার। আপনাদের যে চাহিদা আছে, আমরা তা পূরণ করব। আপনাদেরও কিন্তু দেশের প্রতি দায়িত্ব আছে, সেটা আপনাদের মনে রাখতে হবে।' চলতি অর্থবছর সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, '২০০৯ সালে বাজেট ছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকা যখন সরকার গঠন করি। এই ১৫ বছরের মধ্যে এত বড় বাজেট দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি।' গত অর্থবছরের তুলনায় এবারের বাজেট প্রায় ৪.৬ শতাংশ বড় জানিয়ে তিনি বলেন, 'বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি প্রায় ১৩ গুণ বৃদ্ধি করেছি। রপ্তানি আয় ৫ গুণ এবং রেমিট্যান্স ৬ গুণের বেশি এসেছে। দারিদ্র্যের হার কমিয়েছি। যেটা আগে ৪৮.৫ শতাংশ ছিল, সেটা এখন ১৮.৬ ভাগ। যদি কোভিড, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনিতে গণহত্যা না হতো, তাহলে বিশ্বের অর্থনীতি ভালো থাকত, আমরাও আরও এগিয়ে যেতে পারতাম। এ জন্য অনেকটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এরপরও আমরা দারিদ্র্যের হার কমিয়েছি। অতিদারিদ্র্যের হার যেটা ২৫.১ ভাগ ছিল, সেটা ৫.৬ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশালস্নাহ অতিদরিদ্র বলে বাংলাদেশে কেউ থাকবে না।' গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের জন্য সরকারে আশ্রয়ন প্রকল্পের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'ইনশালস্নাহ মাত্র কয়েকদিনের ভেতর আরও কয়েক হাজার ঘর দিলেই প্রত্যেকের একটা ঘর হবে।' সরকারপ্রধানের ভাষ্য, উন্নয়নের ছোঁয়া এখন পৌঁছে গেছে তৃণমূল পর্যন্ত। তিনি বলেন, 'ঘরে ঘরে বিদু্যৎ দেওয়া হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদনে জোর দিচ্ছি। হাইড্রোজেন বিদু্যৎ উৎপাদনে প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। আমাদের অর্থনীতি এখন বিশ্বের ৩৩তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। সামনের দিকে আমরা আরও বড় করতে পারব বলে আমার বিশ্বাস। আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নিচ্ছি। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিচ্ছি। ২০১০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছিলাম, যে লক্ষ্য স্থির করেছিলাম; সেটা আমরা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।' পরিকল্পিতভাবে কাজ করার ফলে মাত্র ১৫ বছরে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে 'উন্নতি সম্ভব হয়েছে' বলেও মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে দেশের অর্থনীতি 'চাপের মুখে পড়েছে'। উৎপাদন, রপ্তানি এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়িয়ে অর্থনীতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানান শেখ হাসিনা। সরকার কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'চতুর্থ শিল্প বিপস্নবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলে যাওয়ার জন্য এটা প্রয়োজন। দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে।' যুবসমাজকে ব্যবসায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে রপ্তানি ট্রফি গ্রহণে অনেক যুবককে দেখে আমার ভালো লাগল যে, অনেক যুবক ট্রফি হাতে তুলে নিয়েছে। এটাতে আমি একটা আশার আলো দেখি যে, দেশটাই এগিয়ে যাবে আমাদের যুব সমাজ।