পশ্চিমা বিশ্বে বড়দিন উৎসবের প্রয়োজনীয় উপকরণের সিংহভাগ সরবরাহ করে চীন। কিন্তু এবার চীনের দক্ষিণাঞ্চলের ক্রিসমাস ট্রি প্রস্তুতকারক গোল্ডেন আর্টস গিফটস অ্যান্ড ডেকোরে উৎসাহ নেই।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের হামলার কারণে জাহাজ ভাড়া বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে গোল্ডেন আর্টসের ব্যবস্থাপক রিচার্ড চ্যান বলেন, এবার বড়দিনে তাদের ব্যবসা দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হতে পারে।
রিচার্ড চ্যান বলেন, 'এবার বড়দিনে আমরা মুনাফা করার কথা ভাবছি না। এবার আমাদের টিকে থাকাটাই কথা। লোহিত সাগরের সংকট বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।'
গোল্ডেন আর্টস ওয়ালমার্টের পণ্য সরবরাহ করে। ইউরোপ ও আমেরিকায় ওয়ালমার্টের ৮০ শতাংশ পণ্য তারাই সরবরাহ করে। রিচার্ড চ্যান আরও বলেন, লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হুতি বিদ্রোহীদের হামলার কারণে পরিবহণের সময় বেড়েছে। সে কারণে তাদের গ্রাহকেরা এবার আগেভাগে পণ্য সরবরাহের অনুরোধ করেছেন; অন্তত এক মাস আগে জাহাজীকরণের কথা বলেছেন তারা।
এই চ্যালেঞ্জ শুধু রিচার্ড চ্যানের কারখানার নয়; চীনের সব কারখানাই কমবেশি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। সব কারখানার কাছেই গ্রাহকেরা আগেভাগে পণ্য চান; কিন্তু এভাবে সময়সীমা এগিয়ে আনায় কারখানাগুলো সময়মতো পণ্য সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছে।
জাহাজীকরণের যতটা আগে জাহাজভাড়া করা যাবে, ভাড়া ততই কম হবে। হঠাৎ জাহাজ ভাড়া করতে হলে বেশি অর্থ দিতে হয়। গত জুনে স্বল্প সময়ের নোটিশে এশিয়া থেকে ইউরোপে ৪০ ফুট কনটেইনার পাঠানোর ভাড়া ৬ হাজার ৮৫৫ ডলারে উঠেছিল। পণ্যবাহী জাহাজ পরিবহণ নজরদারি করা প্রতিষ্ঠান জেনেটার তথ্যানুসারে, গত দুই মাসের ব্যবধানে এই ভাড়া বেড়েছে ১১০ শতাংশের বেশি। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা পাঁচ গুণ।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিশ্বের সব দেশের আমদানিকারক, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। লোহিত সাগরে যে সংকট চলছে এবং হুতি বিদ্রোহীরা যেভাবে হামলা চালাচ্ছেন, তাতে অনেক জাহাজ এখন ঘুরপথে চলছে। এতে ব্যয় ও সময়- উভয়ই বেশি পড়ছে। এই সংকট দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং সংকট সমাধানের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
জাহাজ চলাচল পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ১৯ শতাংশ ও ইউরোপের ২৬ শতাংশ কোম্পানি জাহাজ চলাচলের সময়সীমা এগিয়ে আনছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক বৃদ্ধির পরিকল্পনা আছে। সে কারণেও জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে। রপ্তানিকারকদের লক্ষ্য, যেভাবেই হোক, যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক বৃদ্ধির আগেই পণ্য পাঠানো। এতে পণ্যবাহী জাহাজের চাহিদা বেড়ে ভাড়া বেড়ে যাবে বলেই আশঙ্কা। যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে, সেগুলো হলো বৈদু্যতিক গাড়িসংক্রান্ত উপকরণ, ব্যাটারির উপকরণ ও সৌরবিদু্যতের প্যানেল।