অব্যাহত পতনের পর অবশেষে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্যসূচক কিছুটা বেড়েছে। তবে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। একই সঙ্গে দাম কমার তালিকায় রয়েছে অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচক ও লেনদেন উভয়ই কমেছে।
টানা দরপতনের কারণে গত মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৪২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে যায়। এ অবস্থায় বুধবার (১২) কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলল। অবশ্য তা বিনিয়োগকারীদের খুব একটা সন্তুষ্ট করতে পারছে না। কারণ সূচক বাড়লেও দাম কমার তালিকায় রয়েছে অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন শেয়ার বিক্রি করে ঈদের আগে আর টাকা তোলা সম্ভব না। তাই ঈদকেন্দ্রিক বিক্রির চাপ কমেছে। এ কারণে দরপতনের মাত্রা কমেছে এবং সূচক ঊর্ধ্বমুখী।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বুধবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
কিন্তু লেনদেনের শেষদিকে দাম বাড়ার তালিকা থেকে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। ফলে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতা কমে এবং দাম কমার তালিকায় চলে আসে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১৬১ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৮ প্রতিষ্ঠানের। এছাড়া ৬৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এরপরও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৮৩ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১০০ পয়েন্টে। এছাড়া বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৮১২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
ডিএসইর এক সদস্য বলেন, ঈদের আগে সবসময় শেয়ার বিক্রির একটা চাপ থাকে। এবারও সেটি ছিল। এর সঙ্গে বাজেটে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপ করা হলে বাজারে পতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। তবে ঈদকেন্দ্রিক বিক্রির চাপ কমে গেছে। এ কারণে আজ বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী।
তিনি বলেন, শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলতে তিন দিনের মতো সময় লাগে। ঈদের আগে আর মাত্র এক কার্যদিবস রয়েছে। সুতরাং এখন শেয়ার বিক্রি করে ঈদের আগে আর টাকা তোলা সম্ভব না। তাছাড়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম অনেক কমে গেছে। বিনিয়োগকারীরা বড় লোকসানে রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করবেন না এটাই স্বাভাবিক।
এদিন সবকয়টি মূল্যসূচক বাড়লেও কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৫০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৩১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৮০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ইউনিলিভার কনজু্যমার কেয়ারের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার। ১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, ওরিয়ন ফার্মা, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, ই-জেনারেশন, রূপালী লাইফ ইন্সু্যরেন্স, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৪টির এবং ৪৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ২৯ লাখ টাকার। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১০৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।