রেমালে ভেসে গেছে ৪০ হাজার চিংড়ি ঘের, রপ্তানি কমার শঙ্কা

উপকূলীয় বাগেরহাটের ৯টি উপজেলায় ৭৪ হাজার চিংড়ি ঘের রয়েছে। জেলার ৭০ শতাংশ মানুষ চিংড়ি চাষে জড়িত। চিংড়ি চাষ করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। চিংড়ি খাতের মোট রপ্তানি আয়ের ৪০ ভাগই আসে বাগেরহাট থেকে

প্রকাশ | ০২ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বাগেরহাটের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রেমালের জলোচ্ছ্বাসে ৪০ হাজার চিংড়ি ঘের ভেসে গিয়ে চাষিদের ১০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ। সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব চাষিরা যেন আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেন তার জন্য সহজ শর্তে ঋণের আশ্বাসও দেওয়া হচ্ছে। ঝড় আঘাত হানার পাঁচ দিন পর শুক্রবার বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, রেমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে বাগেরহাটের চিংড়ি ঘেরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মোংলা, রামপাল, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলার বেশিরভাগ ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪০ হাজার ঘের জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। জেলার মোট ঘেরের ৫৪ শতাংশ ঘের ভেসে গেছে বলে জানান তিনি। উপকূলীয় বাগেরহাটের ৯টি উপজেলায় ৭৪ হাজার চিংড়ি ঘের রয়েছে। জেলার ৭০ শতাংশ মানুষ চিংড়ি চাষে জড়িত। চিংড়ি চাষ করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। চিংড়ি খাতের মোট রপ্তানি আয়ের ৪০ ভাগই আসে বাগেরহাট থেকে। ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানার পর সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের জয়গাছি গ্রামের চিত্রই পাল্টে যায়। পানিতে চারদিক একাকার হয়ে যায়। কোনটা মাছের ঘের তা আলাদা করে বোঝার কোনো উপায় ছিল না। গ্রামের চিংড়ি চাষি সোহেলুর রহমান বলেন, 'ঝড়ের প্রভাবে জোয়ারের এমন জলোচ্ছ্বাস আমার ৫৩ বছর বয়সে আগে কখনো দেখিনি। এই এলাকা অনেক উঁচু। এখানে পানি উঠতে হলে পানির উচ্চতা অনেক হতে হবে। উঁচু বাঁধ উপচে ও ভেঙে রাস্তাঘাট ভেসে জোয়ারের পানি বাড়িতে পর্যন্ত উঠে গেছে। ৪৫ বিঘা জমিতে ২৫টি মাছের ঘের রয়েছে সোহেলুরের। সেখানে বাগদা, গলদা ও সাদা মাছ ছিল। বাঁধ ভেঙে সব মাছ ভেসে গেছে। সব মিলিয়ে অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে সোহেলুর বলছিলেন, এই ক্ষতি পোষাবো কেমনে? ব্যাংকসহ ২০ লাখ টাকা ঋণে আছি। নতুন করে মাছ ছাড়ব তার টাকাও হাতে নেই। সব মিলিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।' সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়ে এই চিংড়ি চাষি বলেন, 'আমার মতো হাজার হাজার চিংড়ি চাষি এমন ক্ষতির মুখে পড়েছেন।' মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া শনিরজোড় এলাকার চিংড়ি চাষি আলাউদ্দিন হায়দার সুমনের দুই বিঘার ঘের আছে। সেখানে তিনি গলদা, বাগদা ও সাদা মাছের চাষ করেন। জলোচ্ছ্বাসে ঘের ভেসে গেছে। সুমন বলছিলেন, 'প্রায় এক কোটি টাকার মাছ ছাড়া ছিল। সব বের হয়ে গেছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা দুঃসাধ্য। দীর্ঘদিন ধরে মাছের চাষ করে আসছি। এমন ক্ষতি আগে কখনো হয়নি।' বাগেরহাটের চাষিদের যে ক্ষতি হয়েছে তাতে এ বছর চিংড়ি রপ্তানি আয়ে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন বলেও জানান সুমন। তবে সেই ধরনের আশঙ্কা দেখছেন না জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল। তিনি বলেন, 'চাষিরা টেকসই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে আবার যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারেন সেজন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এখন যেহেতু চিংড়ি চাষের শুরুর মৌসুম, চাষিরা নতুন করে ঘেরে পোনা ছেড়ে দিলে তারা আবার ঘুরে দাঁড়াবে। তাই রপ্তানি আয়ের প্রভাব পড়বে না।'