চট্টগ্রামে চড়া ডিমের দাম

কাঁচামরিচে 'ডবল সেঞ্চুরি' কমেছে সবজির দাম

সপ্তাহ দু-এক আগেও বেশকিছু সবজির দাম শতকের ঘরে পৌঁছেছিল। আবার কিছু কিছু সবজি শতকের ঘরও অতিক্রম করেছিল। সেই হিসেবে শুক্রবার সবজির দাম কিছুটা কমেছে বলা চলে। তবে মোটা দাগে দেখতে গেলে সবজির দাম এখনো বেশি। শুক্রবার বাজারে সবচেয়ে কমদামি সবজির দাম ৫০ টাকা।

প্রকাশ | ২৫ মে ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
ছবিটি শুক্রবার কারওয়ান বাজারের সবজির দোকান থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা
গত সপ্তাহের তুলনায় বাজারে বেশিরভাগ সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবে 'সবজির দাম কম' বলা যাবে না, কেননা বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম ৪০ টাকা বেড়ে এদিন বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকায় এবং ২০০ টাকা কেজির ধনেপাতা বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকায়। হঠাৎ কাঁচামরিচ ও ধনেপাতার চড়া দামে ক্রেতা-বিক্রেতারা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করছেন। সবজির সঙ্গে সঙ্গে সামান্য দাম কমেছে ব্রয়লার মুরগিরও। বড় সাইজের বা বেশি ওজনের ব্রয়লার মুরগি ১৯০-১৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে মাঝারি ও ছোট সাইজের ব্রয়লার মুরগির দাম এখনো ২০০ টাকার ওপরে। বিক্রেতারা বলছেন, ব্রয়লার মুরগির দাম আর কমার সম্ভাবনা নেই। শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরের কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় বাজারের এ পরিস্থিতি। সপ্তাহ দু-এক আগেও বেশকিছু সবজির দাম শতকের ঘরে পৌঁছেছিল। আবার কিছু কিছু সবজি শতকের ঘরও অতিক্রম করেছিল। সেই হিসেবে শুক্রবার সবজির দাম কিছুটা কমেছে বলা চলে। তবে মোটা দাগে দেখতে গেলে সবজির দাম এখনো বেশি। আজকের (শুক্রবার) বাজারে সবচেয়ে কমদামি সবজির দাম ৫০ টাকা। শুক্রবার বাজারে টমেটো ৮০ টাকা, দেশি গাজর ১০০, চায়না গাজর ১৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৭০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৮০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, করলস্না ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, পটল ৫০-৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, বরবটি ৬০-৮০ টাকা, কচুরলতি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, শজনে ১২০ টাকা, কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৬০ টাকা, চালকুমড়া ৫০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতি হালি লেবু বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা করে। এক্ষেত্রে দেখা যায় বেশিরভাগ সবজির দাম কমেছে ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। তবে সবজির দাম কমলেও এক লাফে বেড়েছে কাঁচামরিচ ও ধনেপাতার দাম। গত সপ্তাহে কাঁচামরিচ ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এদিন তা বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজিতে। একই অবস্থা ধনেপাতারও। গত সপ্তাহে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এদিন তা বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকা কেজিতে। কাঁচামরিচের দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে সবজি বিক্রেতা মো. সাইদুর রহমান বলেন, গরমে নাকি কাঁচামরিচ-ধনেপাতার গাছ নষ্ট হয়ে যায়। তাই বাজারে সরবরাহ কম থাকায় কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে। ভারত থেকে কাঁচামরিচ এলে দাম কমে যাবে। আরেক বিক্রেতা খলিল বলেন, 'অন্য সময় এক পোয়ার (২৫০ গ্রাম) নিচে মরিচ কেউ কিনতো না। কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরে মানুষ ১০০ গ্রাম করে কিনছে। আমাদের বিক্রি কমে গেছে।' বাজার করতে আসা হামিদুর রহমান বলেন, সবজির দাম অনেকটা কমেছে। কিন্তু এটাকে কম দাম বলে না। সব সবজির দাম হওয়া উচিত ৫০ টাকার নিচে। আর কাঁচামরিচের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে না আবার আগের মতো ৫০০ টাকা কেজি হয়ে যায়। সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। আরেক ক্রেতা বলেন, কাঁচামরিচের দাম আগের মতো হওয়ার আগেই সরকারের তা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। এদিকে শুক্রবার বাজারে মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ ৭০-৮০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৫৫ টাকা, বগুড়ার আলু ৭০ টাকা, নতুন দেশি রসুন ২০০ টাকা, চায়না রসুন ২২০ টাকা, চায়না আদা ২৬০ টাকা, ভারতীয় আদা ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় সপ্তাহের ব্যবধানেই চায়না আদার দাম বাড়ছে প্রতি কেজিতে ২০ টাকা করে। আদার বাড়তি দাম প্রসঙ্গে বিক্রেতা সুমন বলেন, ঈদ আসতেছে বলে আদার দাম বাড়ছে। আরও দাম বাড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বলা মুশকিল। তবে বাড়তেও পারে। এছাড়া আজকের বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৩০০-১৮০০ টাকা, রুই মাছ ৩৮০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪৫০-৫৫০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৫০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৯০০- ১৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, কই মাছ ২৬০-৪০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১০০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬৫০-৭০০ টাকা, বেলে মাছ ৬০০-১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০-১০০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১২০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এদিকে ওজন অনুযায়ী, ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২১০ টাকা, কক মুরগি ৩৩০-৩৪০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৬০ টাকা, গরুর মাংস ৭৮০-৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আর মুরগির লাল ডিম ১৪৫ টাকা এবং সাদা ডিম ১৪০ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হয়েছে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে কমেছে ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা। তবে লেয়ার ও দেশি মুরগির দাম বেড়েছে ১০ টাকা করে। ব্রয়লার মুরগির দাম নিয়ে বি-বাড়িয়া চিকেন হাউজের বিক্রেতা মো. সুলতান বলেন, 'আমাদের কিন্তু বেচাকিনি নাই তবুও দাম কমছে না। ঈদের আগে ব্রয়লার মুরগির দাম আর কমবেও না। ১৯০-২০০ বা এর কিছুটা ওপরে থাকবে। ঈদের পরে দাম কমলেও কমতে পারে।' এদিকে সবকিছুর দাম বাড়তে থাকলেও মুদি দোকানের পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মানভেদে ১১০-১৪০ টাকা, ছোট মসুরের ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মুসরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেসারি ডাল ১২০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১৩৫০ টাকা, খোলা ঘি ১২৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। চট্টগ্রামে চড়া ডিমের দাম গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ডিমের বাড়তি দাম। গরমে মুরগি মারা যাওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। এ ছাড়া সরবরাহে ঘাটতি না থাকার পরও ৬০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি। ক্রেতাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো করে দাম নিচ্ছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের। শুক্রবার নগরের চকবাজার, বহদ্দারহাট, কাজীর দেউড়ি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। বাজারে গত সপ্তাহের মতো এখনো বাড়তি ডিমের দাম। ফার্মের লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজন ১৫০ টাকা। আর সাদা ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা ডজন। এ ছাড়া দেশি হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজন ১৭০ টাকা। প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। পটোল পাওয়া যাচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। লাউ আকারভেদে প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, জালি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, আলু ৫৫-৬০ টাকা, লেবু এক হালি বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। খাতুনগঞ্জে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ভারতের পেঁয়াজ ছোট ৬২ থেকে বড় ৭০ টাকা। মেসার্স মিতালী ট্রেডার্সের মোহাম্মদ মোস্তফা জানান, পাবনার পেঁয়াজ আছে আমাদের আড়তে। কেজি ৬৬ টাকা। দেশি পেঁয়াজের দাম কম ও মান ভালো হওয়ায় চাহিদা বেশি। দেশি পেঁয়াজের বস্তায় পচা, গলা কম। ৬৪-৬৫ টাকা কেজি। স্পেশাল বড় পেঁয়াজ ৬৮ টাকা। চীনা রসুন ১৮৪, দেশি রসুন ১৭৫ টাকা। আল আরব বাণিজ্যালয়ে চীনা আদা বিক্রি হচ্ছে ২০০-২০৫ টাকা। গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকা কেজি, খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা কেজি। ব্রয়লার মুরগি ২৩০-৪০ টাকায়, আর লাল মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০-৩৮০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ টাকা করে। বাজারে রুই মাছ ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, ছোট চিংড়ি ৮৫০-৯০০ টাকা কেজি আর বড় চিংড়ি ৭০০ টাকা। এ ছাড়া পাবদা ৪০০, বড় বোয়াল ৬০০, ছোট বোয়াল ৫০০, টেংরা ৮০০, রূপচাঁদা ১২০০, কালিবাউশ ৬০০, মৃগেল ২৮০-৩২০, কার্ফু ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল শুক্কুর বলেন, আমাদের বাড়তি দরে ডিম কিনে আনতে হচ্ছে। ব্যবসা যেহেতু করছি, আমাদেরও তো নূ্যনতম লাভ করতে হয়। তাই এখনো ডিমের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। কাজীর দেউড়ি বাজারের মুরগি বিক্রেতা মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, মুরগির দাম একটু বাড়তি। গরমের ফার্মে মুরগি মারা যাচ্ছে। তাই সরবরাহ কম। আরও কিছুদিন বাড়তি দামেই মুরগি বিক্রি করতে হবে।