বাড়ছে মুদ্রা সরবরাহ বাড়ছে মানুষের হাতে টাকাও

প্রকাশ | ২৩ মে ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
টাকার অভাবে বিদু্যৎ ও সারের পাওনা মেটাতে ব্যাংকগুলোকে বন্ড দিচ্ছে সরকার। আর ব্যাংকগুলো এই বন্ড জমা রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করছে। আর্থিক সংকটে থাকা সরকারকে বাংলাদেশ ব্যাংক একসময় টাকা ছাপিয়ে ঋণ দিত। তবে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সে পথ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরে আসে। এখন সরকার দেনা মেটাতে বন্ড দিচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। সেই বন্ডের বিপরীতে টাকা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বাড়ছে মুদ্রা সরবরাহ। অন্যদিকে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে ঘরে রাখার প্রবণতা আবার বেড়েছে। গত মার্চ মাসে গ্রাহকেরা ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। এসব টাকা ওই মাসে আর ব্যাংকে ফেরত আসেনি। ফলে এই টাকা রয়ে গেছে মানুষের হাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এরপরের মাসগুলোতে মুদ্রা সরবরাহ ও ব্যাংকের বাইরে আরও বেশি পরিমাণ টাকা চলে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমে আসছিল। তবে বন্ডের বিপরীতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। অন্যদিকে ব্যাংক খাতের নানা অনিয়ম ও একীভূত করার উদ্যোগে আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে টাকার পরিমাণ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে ছাপানো টাকার পরিমাণ (রিজার্ভ মানি) ছিল ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। নভেম্বর মাসে যা ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসেই ছাপানো টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৩১ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। ছাপানো টাকার বড় অংশ থাকে মানুষের হাতে ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভল্টে। বাকি অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা থাকে। ডিসেম্বরে মুদ্রা সরবরাহ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, সংকটে পড়া ইসলামি ও প্রচলিত ধারার সাতটি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ভালো দেখাতে এক দিনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ধার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতেই বেড়ে যায় মুদ্রা সরবরাহ। সেই টাকা ফেরত আসায় জানুয়ারিতে রিজার্ভ মানি বা মুদ্রা সরবরাহ কমে হয় ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। তবে ফেব্রম্নয়ারিতে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে হয় ৩ লাখ ৫২ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। গত মার্চে মুদ্রা সরবরাহ আরও বেড়ে হয় ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। জানা গেছে, বিদু্যৎ ও সারের পাওনা মেটাতে ব্যাংকগুলোকে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার বন্ড দিয়েছে সরকার। এর প্রায় পুরোটাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিয়ে ১৮০ দিন মেয়াদে সমপরিমাণ টাকা নিয়েছে ব্যাংকগুলো। এর মেয়াদ শেষ হলে বন্ডের মেয়াদ থাকা পর্যন্ত আবারও ১৮০ দিনের জন্য টাকা নিতে পারবে ব্যাংকগুলো। সরকারের ইসু্য করা বন্ডের মেয়াদ ৮ থেকে ১০ বছর। মুদ্রা সরবরাহ বাড়লে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। তবে মার্চ পর্যন্ত যে মুদ্রা সরবরাহ হয়েছে, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতির প্রক্ষেপণের মধ্যে রয়েছে। মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি মানুষের হাতে নগদ টাকা বাড়ছে। অর্থাৎ মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিজের কাছে রাখছে। জানুয়ারিতে ব্যাংকের বাইরে টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। যা ফেব্রম্নয়ারিতে কিছুটা বেড়ে হয় ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। মার্চে নগদ অর্থের পরিমাণ আরও বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। ফলে শুধু মার্চ মাসেই মানুষের হাতে টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৩ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার পর যা আর ব্যাংকে জমা হয় না, তা-ই ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকা হিসেবে পরিচিত। এই টাকা মানুষ হয় দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে, নয়তো বেশি লাভের আশায় ব্যাংকের বাইরে বিভিন্ন সমিতি, জমি, ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করেন। আবার কেউ কেউ টাকা তুলে ঘরেও রেখে দেন।