করোনা-পরবর্তী মন্দাভাব ও দুই বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে নিম্নমুখী থাকার পর অবশেষে বাড়তে শুরু করেছে ইস্পাতের চাহিদা। চলতি বছর ধাতুটির বৈশ্বিক চাহিদা আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ১৭৯ কোটি ৩০ লাখ টনে পৌঁছাতে পারে। ২০২৫ সালেও চাহিদা বৃদ্ধির এ হার অব্যাহত থাকবে। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের (ডবিস্নউএসএ) এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। খবর রয়টার্স।
চীন বিশ্বের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদক ও ব্যবহারকারী দেশ। সেখানে লম্বা সময় ধরে আবাসন খাতে টালমাটাল পরিস্থিতি ইস্পাত খাতের জন্য চ্যালেঞ্জ বয়ে এনেছে। দেশটিতে চাহিদা ও উৎপাদন অনেকটা কমে গেছে।
এ বছর ধাতুটির বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধিতে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে ভারত। দেশটিতে চাহিদার পাশাপাশি উৎপাদনও বাড়ছে। ভারত সরকার সম্প্রতি ইস্পাত শিল্পের জন্য উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে। ২০৪৭ সালের মধ্যে বছরে ৫০ কোটি টন ইস্পাত উৎপাদনের সক্ষমতা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে দেশটির। স্টিলমিন্ট ইন্ডিয়ার দেওয়া তথ্যমতে, ভারতে ইস্পাতের চাহিদা বছরে ৭ শতাংশ হারে বাড়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ দেশটিতে ইস্পাতের চাহিদা দাঁড়াতে পারে ১৯ কোটি টনে।
ডবিস্নউএসএ বলছে, চীনে ধাতুটির চাহিদা ২০২৩ সালে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ কমে যায়। দেশটির অবকাঠামো খাতে লম্বা সময় ধরে চলা সমস্যার কারণে এ খাতে বিনিয়োগ কমেছে। ফলে চলতি বছরও চীনে ইস্পাতের চাহিদা একই রকম থাকবে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সালেও চাহিদা ১ শতাংশ কমে যাবে, যা ২০২০ সালে রেকর্ড চাহিদার চেয়ে অনেক কম।
এদিকে চীনের চাহিদা নিম্নমুখী হলেও ভারতে ধাতুটির চাহিদা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলছে। ডবিস্নউএসএর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৪ ও ২০২৫ সালে দেশটিতে ইস্পাতের চাহিদা ৮ শতাংশ করে বাড়বে।
অন্যদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে চলতি বছর ইউরোপে ইস্পাতের চাহিদা খুব বেশি বাড়বে না। তবে ২০২৫ সালে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ চাহিদা বাড়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে আবাসন খাতে মন্দা পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ইস্পাতের চাহিদা কমে গিয়েছিল। তবে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে চলতি বছর চাহিদা বাড়তে পারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশটিতে।
ডবিস্নউএসএ জানায়, চলতি বছরের মার্চে অপরিশোধিত ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। মার্চে বৈশ্বিকভাবে মোট ইস্পাত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৬ কোটি ১২ লাখ টন, গত বছর একই সময় যা ছিল ১৬ কোটি ৮৪ লাখ টন। এ সময় বিশ্বের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ চীনে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও ভারতে উৎপাদন বেড়েছে।
ডবিস্নউএসএর তথ্যমতে, গত মার্চে চীনে ধাতুটির উৎপাদন ৮ কোটি ৮৩ লাখ টনে নেমে এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ কম। এদিকে ভারত মার্চে ১ কোটি ২৭ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন করেছে বলে জানায় ওয়ার্ল্ড স্টিল। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উৎপাদন ৭ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে।