মূল্যস্ফীতি হ্রাসে ব্যাংক থেকে ঋণ কমাতে চায় সরকার

বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য প্রতি বছর সরকারকে বিশাল অঙ্কের ঋণ দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে নিতে হয়। এই ঋণ নেওয়ার ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে

প্রকাশ | ২০ মে ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছর ব্যাংক থেকে কম ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী অর্থবছর ব্যাংক ঋণ নেবে ১ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা, চলতি বছর এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা কমানোর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য প্রতি বছর সরকারকে বিশাল অঙ্কের ঋণ দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে নিতে হয়। এই ঋণ নেওয়ার ফলে একদিকে যেমন মূল্যস্ফীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতও ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত ঋণ পেতে বঞ্চিত হয়। এই বাস্তবতায় আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকার ব্যাংক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছে এক লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা। যা, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর ব্যাংক ঋণের লক্ষ্য থেকে তিন হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা কম। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। অর্থবিভাগ থেকে সূত্রে জানা গেছে, মধ্য মেয়াদে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকিং খাত থেকে মোট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছিল এক লাখ ৩৮ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। যে সময় এই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তখন দেশের মূল্যস্ফীতির হার ছিল সাত শতাংশের একটু ওপর। কিন্তু গত আট মাস ধরে এই মূল্যস্ফীতি বেড়ে সাড়ে ৯ শতাংশের ঘরে ঘোরাফেরা করছে। কোনোভাবেই এই মূল্যস্ফীতি লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। এখন সরকারের ব্যাংক ঋণ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি লাগাম কিছুটা কমিয়ে ধরা চেষ্টা করা হবে। অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে চিন্তা করা হয়েছিল আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার হবে ৮ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা কিছুটা খারাপ থাকার কারণে বাধ্য হয়েই বাজেটের আকার ছোট করা হচ্ছে। যেহেতু বাজেটের আকার ছোট হচ্ছে তাই বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণও কমে যাচ্ছে। এদিকে অর্থ বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'সরকার প্রথাগত নমনীয় উৎসের বৈদেশিক ঋণ গ্রহণেই আগ্রহবোধ করে। এতে ঋণ গ্রহণের খরচ কমানোর পাশাপাশি সরকারের পছন্দের ঘাটতি অর্থায়নে এই উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে, সরকারের চাহিদার তুলনায় নমনীয় বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ অপ্রতুল হওয়ায় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে (যেমন ট্রেজারি বিল, ট্রেজারি বন্ড এবং সঞ্চয়পত্র) ঋণ নিতে হবে। অভ্যন্তরীণ ঋণ বাজারকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সরকার মধ্যমেয়াদে বাজারযোগ্য সিকিউরিটিজ থেকে বেশি ঋণ গ্রহণের পরিকল্পনা করছে। সরকারের ইসলামিক সিকিউরিটিজ সুকুক ইসু্য চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও এ মুহূর্তে বিশ্ববাজার থেকে ইউরোবন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের কোনো ইচ্ছা সরকারের নেই।' এদিকে, বাজেট বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেও সরকারকে ব্যাংক থেকে ঋণ কম করতে হয়। যেমন চলতি অর্থবছরে ব্যাংক থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এই হিসেবে ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সময়ে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল ৬৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে আলোচ্য সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিট ৮ হাজার ৭৯ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ৫ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৩০ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ৩ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল।