রোববার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

কর ফাঁকি রোধ করেও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ১৮ মে ২০২৪, ০০:০০
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) আয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের লেখা 'বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আগামীর করণীয়' শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদসহ অতিথিরা -সংগৃহীত

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, স্থানীয় প্রভাবশালীরা অনেক কিছু দখল করেছেন। অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে, যার দরকারও আছে। কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন সেভাবে হচ্ছে কি না, সেটা একটা প্রশ্ন। একটা পর্যায়ে শুধু অবকাঠামো উন্নয়নই যথেষ্ট নয়। টেকসই উন্নয়নের জন্য দরকার মানবসম্পদ উন্নয়নের। করের হার না বাড়িয়ে করজাল বিস্তৃতির পাশাপাশি কর ফাঁকি রোধ করেও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। বলেন, যারা কর দেন তাদের আরও করের বোঝা চাপানো ভারী অন্যায়।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) আয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের লেখা 'বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আগামীর করণীয়' শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য শামস্‌ রহমান বিশেষ অতিথি ছিলেন। বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন ছিলেন সঞ্চালক।

দেশে পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতি চলছে, এমন পর্যবেক্ষণ জানিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, প্রায় সব বিষয়ে রাজনীতিকরণ পরিহার করতে হবে। তার প্রশ্ন, ব্যাংকের অর্থ লুটপাট করায় কি রাজনৈতিক প্রয়োজন ছিল? এ বিষয়ে ফরাসউদ্দিনের বইয়ে বিশ্লেষণ থাকতে পারত বলে মনে করেন তিনি।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালীরা অনেক কিছু দখল করেছেন। অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে যার দরকারও আছে। কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন সেভাবে হচ্ছে কি না সেটা একটা প্রশ্ন। একটা পর্যায়ে শুধু অবকাঠামো উন্নয়নই যথেষ্ট নয়। টেকসই উন্নয়নের জন্য দরকার মানবসম্পদ উন্নয়নের। করের হার না বাড়িয়ে করজাল বিস্তৃতির পাশাপাশি কর ফাঁকি রোধ করেও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। বলেন, যারা কর দেন তাদের আরও করের বোঝা চাপানো ভারী অন্যায়।

ফরাসউদ্দিন নিজেকে আমলা বললেও ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, 'আমলা শব্দটি কেমন যেন নেতিবাচক লাগে। আমরা তাই বলব তিনি ইকোনোক্র্যাট। তার লেখা বইটি ছোট আকারের (৬৩ পৃষ্ঠা) হলেও বড় প্রেক্ষাপটে তা আসলে উন্নয়নের রূপরেখা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আগে এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরির কাজ যখন চলমান, বইটি তখন নীতিনির্ধারকদের কাজে লাগবে।'

তিন কারণে ভোগান্তির কবলে দেশ

অনুষ্ঠানের শুরুতে ফরাসউদ্দিন বলেন, তিন কারণে দেশের মানুষ এখন বিপদে। এক. ১০ বছর ধরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান জোর করে ধরে রাখা। দুই. আড়াই থেকে তিন বছর ধরে সুদের হার ৯ ও ৬ শতাংশে থাকা এবং তিন. একাধিক মুদ্রা বিনিময় হার বজায় রাখা। এই তিন জিনিস অর্থনীতির যে পরিমাণ ক্ষতি করেছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে বহু সময় লাগবে।

রাজনীতি ও অর্থনীতির সম্পর্ককে অসম মন্তব্য করে ফরাসউদ্দিন বলেন, রাজনীতিবিদরা অর্থনীতিবিদদের গৃহভৃত্য না হলেও হুকুমের আজ্ঞাবহ হিসেবে দেখতে চান। অথচ অর্থনীতিবিদরা জ্ঞানী মানুষ। গণমাধ্যমে বা টেলিভিশনে তারা কথা বলেন। রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের উচিত হবে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের কথা শোনা।

ফরাসউদ্দিনের তিন প্রস্তাবের সমালোচনা

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদটিকে সাংবিধানিক করার প্রস্তাব দিয়েছেন ফরাসউদ্দিন। এ পদে ছয় বছরের জন্য নিয়োগেরও পক্ষে তিনি। দুই বছরের নোটিশ দিয়ে বাণিজ্যভিত্তিক কৃষি খাতের ওপর কর আরোপের পরামর্শ দিয়ে ফরাসউদ্দিন বলেন, বড় খেলাপিদের সাত, আট, নয়বার করে ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। ঋণখেলাপি ও মুদ্রা পাচারকারীরা একই সূত্রে গাঁথা।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, গভর্নরের পদকে সাংবিধানিক করে কী লাভ? ওই পদে দুষ্ট লোক বসে থাকলে তো তা আরও খারাপ হবে।

আরেক আলোচক কৃষি অর্থনীতিবিদ এম এ সাত্তার মন্ডল বলেন, 'দেশে বাণিজ্যভিত্তিক কৃষি খাতের উলস্নম্ফন ঘটছে, দ্বিমত করছি না। তবে যে অর্থে লাভজনক বলা হচ্ছে বা কর আরোপের কথা বলা হচ্ছে, বাস্তবে এ খাত খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে করের আওতায় আনার সময় এখনই আসেনি।'

মসিউর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানকে খেলাপি বা দেউলিয়া ঘোষণা করা সহজ। কিন্তু যখন দেখা যায় প্রতিষ্ঠান আছে এবং মানুষ কাজ করছে তখন চিন্তা করতে হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে