শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

টানা পাঁচ কার্যদিবস পতনে শেয়ারবাজার

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ১৭ মে ২০২৪, ০০:০০
টানা পাঁচ কার্যদিবস পতনে শেয়ারবাজার

টানা দরপতনের বৃত্তে আটকে গেছে দেশের শেয়ারবাজার। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সব কয়টি মূল্যসূচক কমেছে। এর মাধ্যমে টানা পাঁচ কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।

পাঁচ কার্যদিবসের এই পতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক কমল ১৪৩ পয়েন্ট। রিজার্ভ কমে যাওয়ার সংবাদ, রিজার্ভ চুরি হওয়ার গুঞ্জন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপের গুঞ্জন এবং দাম কমার সর্বোচ্চ সীমা ৩ শতাংশ বেঁধে দেওয়ার কারণে শেয়ার বাজারে এই টানা দরপতন হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

সপ্তাহের প্রথম চার কার্যদিবস দরপতনের পর শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। এতে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়।

তবে লেনদেন শুরুর পর আধাঘণ্টা পার হওয়ার আগেই এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ান। ফলে দাম বাড়ার তালিকা থেকে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। এতে সূচকও ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এই পতনের ধারা অব্যাহত থাকে।

এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১২২ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৫ প্রতিষ্ঠানের। আর ৫৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৯ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৫১৯ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় শূন্য দশমিক ৮০ পয়েন্ট কমে এক হাজার ২১২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯৭৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

এদিকে সবকয়টি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬৭৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫২৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১৫০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৬ কোটি ২৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার। ৩০ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ই-জেনারেশন।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, ফারইস্ট নিটিং, ওরিয়ন ইনফিউশন, বিচ হ্যাচারি, প্রগতি লাইফ ইন্সু্যরেন্স, সোনালী আঁশ এবং গোল্ডেন সন।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৫৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৫১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৩টির এবং ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

শেয়ারবাজারে টানা দরপতন সম্পর্কে বুধবার মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশিকুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারে কয়েকটি কারণে দরপতন হচ্ছে। এর মধ্যে একটি কারণ জাতীয় বিভিন্ন দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারে নিচে নেমে গেছে। আবার ভারতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ হয়েছে রিজার্ভ চুরি হয়েছে। রিজার্ভ নিয়ে এমন সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ফলে শেয়ারবাজারে টনা দরপতন দেখা যাচ্ছে। এখন রিজার্ভের প্রকৃত চিত্র কী সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে স্পষ্ট করা উচিত।

তিনি বলেন, দরপতনের আর একটি কারণ হলো ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স নিয়ে ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জন। আমরা শুনেছিলাম শেয়ারবাজারে ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ট্যাক্স বসানো হবে না। কিন্তু এখন আবার গুঞ্জন ছড়িয়েছে আগামী বাজেটে ক্যাপিটাল গেইনে ট্যাক্স বসানো হতে পারে। ফলে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে দাম কামার সর্বনিম্ন সীমা ৩ শতাংশ বেঁধে দেওয়ায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

আশিকুর রহমান আরও বলেন, বিনিয়োগকারীরা স্বাভাবিক লেনদেন করতে চান। কিন্তু দাম কমার সীমা ৩ শতাংশ বেঁধে দেওয়ার কারণে স্বাভাবিক লেনদেন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। টাকা আটকে যেতে পারে এমন শঙ্কায় এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছেন। আর বিক্রির চাপ বাড়ায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে