শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাইপথে আসা ভারতীয় চিনিতে সয়লাব দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ ভোগ্য পণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জসহ পুরো চট্টগ্রাম। কালোবাজারে আসা এসব চিনি বাজারজাত হওয়ার প্রভাবে খাতুনগঞ্জে মাসের ব্যবধানে প্রতি মণ চিনির দাম কমেছে ৪শ' টাকার মতো। তবে খুচরা বাজারে এর প্রভাব নেই।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চোরাইপথে আসা ভারতীয় চিনি মানহীন। কালোবাজারের মানহীন এসব চিনির কারণে মার খাচ্ছে দেশি শিল্পে পরিশোধিত চিনির বাজার। আবার সরকার বড় অংকের রাজস্ব হারালেও খুচরায় দাম না কমায় ভোক্তারা হচ্ছেন প্রতারিত।
জানা যায়, স্বাভাবিক হিসাবে দেশে প্রায় ২২ লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় ১৫ চিনি কল থেকে বছরে আসে ২৫ হাজার টনের মতো পরিশোধিত চিনি। যে কারণে বেসরকারি পর্যায়ে সিংহভাগ চিনি আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটাতে হয়। এজন্য প্রায় ২২ লাখ টনের বেশি 'র' সুগার আমদানি করে সিটি গ্রম্নপ, মেঘনা গ্রম্নপ, আবদুল মোনেম কোম্পানি, দেশবন্ধু সুগার ও এস আলম সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৬ মে পর্যন্ত ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৫৪২ টন চিনি আমদানি হয়েছে। এসব চিনি আমদানিতে ৬ হাজার ৩৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮৯ টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার।
খাতুনগঞ্জের আড়তদার ও ডিও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত এক মাসের ব্যবধানে প্রতি মণ চিনির দাম কমেছে ৪শ' টাকার মতো। মঙ্গলবার এস আলমের রেডি চিনি (মিল গেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরাসরি ডেলিভারি) প্রতি মণ ৪৬২৫ থেকে ৪৬৩০ টাকা। তিন-চারদিনের ব্যবধানে সরবরাহ পাওয়া যায় এমন ডিও বিক্রি হচ্ছে ৪৫৭০-৪৫৮০ টাকায়। চট্টগ্রামের এস আলমের পাশাপাশি মেঘনা, সিটি ও আবদুল মোনেম কোম্পানির চিনি রয়েছে। তবে একমাস আগে রমজানের শেষের দিকে এসব চিনির মূল্য ছিল ৫ হাজার টাকার কিছু কমবেশি।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারের তেল-চিনির বড় ব্যবসায়ী আর এম এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক আলমগীর পারভেজ বলেন, 'চোরাইপথে আসা ভারতীয় চিনিতে পুরো খাতুনগঞ্জ ভরপুর। যারা খাতুনগঞ্জে বসে রেডি চিনির ব্যবসা করেন তাদের বেশিরভাগই এখন ভারতীয় চিনি বিক্রি করছেন। দেশি চিনির চেয়ে ভারতীয় এসব চিনি প্রতি মণে প্রায় এক হাজার টাকার মতো কম। তাই খুচরা দোকানদার, শহরের বাইরের মুদি দোকান কিংবা খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতীয় চিনি কিনছে।'
তিনি বলেন, 'শুল্ক ফাঁকির চিনি বাজারজাত হওয়ার কারণে সরকার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। আবার দেশীয় কারখানাগুলো বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হচ্ছে, যা দেশি কারখানাগুলোতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।'
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, 'শুল্ক ফাঁকির কালোবাজারের চিনির কারণে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারের উচিত চোরাইপথে চিনি প্রবেশ রোধে ব্যবস্থা নেওয়া।'
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চিনির দামের দ্বিগুণ তফাৎ। মঙ্গলবারের হিসাব অনুযায়ী ভারতের পশ্চিমবঙ্গে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি ৪৫ রুপি, যা বাংলাদেশের হিসাবে ৭০ টাকার মতো। আর মঙ্গলবার চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি বাজারে প্রতি কেজি খুচরা চিনি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশে প্রতি কেজি চিনিতে ৩৭ টাকার মতো শুল্ক দিতে হয়। যে কারণে ভারতের বাজার থেকে চিনি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে কয়েকটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, ফেনী এবং চট্টগ্রামের মীরসরাই সীমান্ত দিয়ে আসা চিনি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে।