আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে বিদ্যমান আর্থিক প্রণোদনাসহ অ-আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর পরামর্শ এবং দেশের রিজার্ভ বাড়াতে সরকার প্রবাসীদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে আনার জন্য এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সাধারণত একটি দেশে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ রিজার্ভ রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিশ্বে বর্তমানে নানা ধরনের সংকট বিরাজ করছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় অংশ আসে তৈরি পোশাক রপ্তানি খাত থেকে। এরপরই বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স। ব্যাংকিং চ্যানেলে নানা জটিলতা এবং হুন্ডি ব্যবসায়ীদের দৌরত্বে রেমিট্যান্সের বড় একটি অংশ তাদের কব্জায়। এ অবস্থায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য নতুন করে কি কি করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
গত ২৪ এপ্রিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রবাসী আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের অ-আর্থিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বর্তমানে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গত প্রায় তিন দশক ধরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমান সরকার ২০০৯-২০১০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ের উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই সময়ে গড়ে প্রতি বছর বাংলাদেশের মোট আমদানি হয়েছে ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলার এবং একই সময়ে গড়ে প্রতি বছর প্রবাসী আয় এসেছে ১৫.৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ সময়ে প্রতি বছর গড় আমদানি মূল্যের ৩৪.৩ শতাংশের সমপরিমাণ অংশই প্রবাসী আয় দিয়ে মেটানো হয়েছে।
প্রবাসী আয়ের গতি বাড়াতে ইতোপূর্বে অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে। এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের সুপারিশগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের সুপারিশে বলা হয়েছে, আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদ্যামান আর্থিক প্রণোদনাসহ অ-আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থাগুলো হতে পারে-প্রবাসী রেমিট্যান্স উদ্বুদ্ধকরণে প্রবাসীর নিজ নামে অথবা তার অথোরাইজড বেনিফিসিয়ারী বরাবর একটি রেমিট্যান্স কার্ড প্রবর্তন করা যেতে পারে। উক্ত কার্ডে প্রবাসী কর্তৃক প্রেরিত রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রণোদনা হিসেবে রিওয়ার্ড পয়েন্ট প্রদান করার কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। এ সুবিধা প্রবাসীদের বিদেশ থেকে প্রেরিত রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রযোজ্য হারে (প্রতি এক হাজার টাকার রেমিট্যান্সের বিপরীতে ০.৫/১/২ রিওয়ার্ড পয়েন্ট যোগ হতে পারে) রেমিট্যান্স কার্ড অথবা নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে জমা হবে। একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে রেমিট্যান্স কার্ড ইসু্য করা হবে এবং ব্যাংক থেকে একজন প্রবাসীর অথোরাইজড বেনিফিশিয়ারী রেমিট্যান্স কার্ড গ্রহণ করবেন।
সূত্র জানায়, উক্ত কার্ডে অথবা ব্যাংক হিসাবে জমাকৃত রিওয়ার্ড পয়েন্ট প্রবাসীরা রিওয়ার্ড পয়েন্ট ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করা যেকোনো মার্চেন্ট শপে গিয়ে বেনিফিশিয়ারী রিডিম করবে। বিভিন্ন সরকারি ফি পরিশোধের ক্ষেত্রে রিওয়ার্ড পয়েন্ট রিডিম করা যেতে পারে। যেমন-জন্ম নিবন্ধণ ফি, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন/সংশোধন ফি,মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট ফি, জমি/ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন ফি, জমির খাজনা প্রদান, ইউটিলিটি বিল প্রদানের ক্ষেত্রে, সরকারি মেডিক্যাল হাসপাতালে বিল প্রদান, সরকারি স্কুল/কলেজের ফি প্রদান, প্রবাসী স্কিমের কিস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে এবং ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে তারা রিওয়ার্ড পয়েন্টের সুযোগ নিতে পারবেন।
এছাড়াও বিদ্যমান সুবিধাসমূহ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। যেমন-বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির (অনিবাসী বাংলাদেশি) সংখ্যা বৃদ্ধি করা যেতে পারে, গৃহ নির্মাণ ঋণ সুবিধা ৭৫:২৫ ডেট ইকু্যয়িটি রেশিও বৃদ্ধি করে ৮০:২০ রেশিও করা যেতে পারে, ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ মনে করে, সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠাতে উৎসাহিত হবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ২৪ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির দ্বিতীয় সভায় অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঠানো সুপারিশগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে কমিটির দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।