ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় পুঁজিবাজার

প্রকাশ | ০৪ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দীর্ঘদিন ধরে পতনের বৃত্তে আটকে ছিল দেশের পুঁজিবাজার। এমন পতনের কারণে বিনিয়োগকারীদের মাঝে বিরাজ করছে নানা রকম অস্থিরতা। তবে বিদায়ী সপ্তাহে বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। আলোচ্য সপ্তাহে অর্থাৎ ২৮ এপ্রিল ২ মে পর্যন্ত ৪ কর্মদিবসের মধ্যে ৩ কর্মদিবসেই সূচক ইতিবাচক ছিল, বেড়েছে লেনদেনও। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পুনর্নিয়োগের খবরে শেয়ারবাজারে চাঙ্গাভাব দেখা গেছে। এরই মধ্যে ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ট্যাক্স আরোপের গুঞ্জন শুরু হয়, যার ফলে দীর্ঘদিন ধারাবাহিক মন্দার বৃত্তে থাকা শেয়ারবাজার ইতিবাচক প্রবণতায় ফিরতে শুরু করলেই ফের হোঁচট খায়, আবারও নেতিবাচক প্রবণতায় ফিরে যায়। এরপর বিএসইসির চেয়ারম্যান গত মঙ্গলবার বিকালে ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ট্যাক্স আরোপ না হওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার করলে লেনদেনের শুরু থেকে বাজার ইতিবাচক প্রবণতায় অগ্রসর হয়। যা সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। গত ১১ ফেব্রম্নয়ারি থেকে শুরু হওয়া দীর্ঘ পতন বিদায়ী সপ্তাহে এসে থেমেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ট্যাক্স না হওয়ার বিষয়ে এখনো সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা আশ্বস্ত নন। যে কারণে বাজারে কাঙ্ক্ষিত চাঙাভাব ফিরতে দেরি হচ্ছে। তবে বাজার পরিস্থিতি দেখে সহজেই অনুমেয় যে, বাজার নিয়ে ছোট ও বড় বিনিয়োগকারীদের যে শঙ্কা ছিল তা কাটতে শুরু করেছে। ব্যক্তিশ্রেণির সব বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে বাজার ফিরছে। যে কারণে সূচক ও লেনদেনে ছিল ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৪১২টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ২২৮টির দর বেড়েছে, ১৩৩টির দর কমেছে, ৩৪টির দর অপরিবর্তিত ছিল এবং ১৭টির লেনদেন হয়নি। বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে চার কার্যদিবসে মোট বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে চার কার্যদিবসে মোট দুই হাজার ৮২৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে পাঁচ কার্যদিবসে মোট দুই হাজার ৭৬৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৫৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সপ্তাহটিতে ডিএসইর প্রধান সূচক ৯৭.১৭ পয়েন্ট বেড়ে ৫,৬১৫.৬৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ্‌ সূচক ১৫.১৬ পয়েন্ট বেড়ে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৩৩.৩৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১,২৩২.৪৩ পয়েন্টে এবং ২,০০৭.৮৬ পয়েন্টে। বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনের নেতৃত্বে উঠে এসেছে মালেক স্পিনিং মিলস লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ৩৯ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৫.৫৫ শতাংশ। লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ৩৬ কোটি ৫৬ লাখ ৮০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৫.১৮ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে রয়েছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ৩৪ কোটি ২৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৪.৮৫ শতাংশ। এছাড়া প্রতিদিন গড় লেনদেনে সাপ্তাহিক শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে লাভেলো আইসক্রিমের ৩২ কোটি ৬৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ওরিয়ন ইনফিউশনের ৩১ কোটি ২২ লাখ ৯০ হাজার টাকা, আইটি কনসালটান্টসের ২২ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, সোনালী আঁশের ২১ কোটি ২৮ লাখ ১০ হাজার টাকা, গোল্ডেন সনের ১৬ কোটি ৬৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ওরিয়ন ফার্মার ১৫ কোটি ৩৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং সালভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ১৪ কোটি ৬২ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে জেএমআই সিরিঞ্জ এন্ড মেডিকেল ডিভাইসেস লিমিটেডের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ২৪.০১ শতাংশ। সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে এপেক্স ট্যানারির ২২.৬৭ শতাংশ, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের ২২.৫০ শতাংশ, সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজের ২২.৪৪ শতাংশ, সোনারগাঁও টেক্সটাইলের ২২.৩২ শতাংশ, ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডের ২২.১২ শতাংশ, প্রগতি লাইফ ইন্সু্যরেন্সের ২০.৬৭ শতাংশ, ম্যাকসন্স স্পিনিংয়ের ২০.৩৫ শতাংশ, ফারইস্ট নিটিংয়ের ২০.০০ শতাংশ এবং অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ১৯.৬৬ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে। সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে রূপালী ব্যাংক পিএলসির। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৬.৬১ শতাংশ কমেছে। সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষ তালিকায় স্থান পাওয়া অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে এডিএন টেলিকমের ১১.৪৫ শতাংশ, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৯.০৯ শতাংশ, ইফাদ অটোসের ৯.৮১ শতাংশ, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ৮.৩৫ শতাংশ, এইচআর টেক্সটাইলের ৮.৩৫ শতাংশ, আফতাব অটোমোবাইলসের ৮.১১ শতাংশ শেয়ারদর কমেছে।