বর্তমান বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে বিনিয়োগের আদর্শ গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করছেন অনেক চীনা বিনিয়োগকারী। তারা এজন্য বাংলাদেশে নতুন বিনিয়োগসহ বিনিয়োগ স্থানান্তর করতে আগ্রহী।
বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের কুয়ানঝু সিটিতে আয়োজিত "বাংলাদেশের ইপিজেডসমূহ এবং বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ সম্ভাবনা" শীর্ষক একটি সেমিনার শেষে সাইড টেবিল আলোচনায় চীনা বিনিয়োগকারীগণ এই আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন। কুয়ানঝু মেরিটাইম সিল্ক রোড ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তায় গত ৩০ এপ্রিল বেপজা এই সেমিনারের আয়োজন করে। বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী চীনের বিভিন্ন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান/শিল্প গ্রম্নপের প্রায় ১০০ জন প্রতিনিধি সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মো. জিয়াউর রহমান সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশে বিরাজমান বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশ বিশেষত প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান, কর্মক্ষম জনশক্তি, বৃহৎ ও সম্প্রসারণশীল অভ্যন্তরীণ বাজার, স্থিতিশীল সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশ ইত্যাদি বাংলাদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল কারণ, তিনি যোগ করেন।
মেজর জেনারেল জিয়া বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রধান আকর্ষণ হলো সহজলভ্য, উৎপাদনশীল, পর্যাপ্ত এবং সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য শ্রমশক্তি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিতভাবে তার বৈদেশিক বিনিয়োগ নীতিকে উদারীকরণ করে আসছে। দ্রম্নত এবং উন্নত সেবা প্রদানের জন্য সরকার বাংলাদেশের বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থাগুলির জন্য "ওয়ান স্টপ সার্ভিস অ্যাক্ট" প্রণয়ন করেছে, তিনি যোগ করেন।
বেপজার সম্প্রসারণ পরিকল্পনার কথা উলেস্নখ করে নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, চালু ৮টি ইপিজেডের সঙ্গে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বেপজা একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে যেখানে ইতোমধ্যে ২৮টি শিল্প প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং কয়েকটি উৎপাদনও শুরু করেছে। এছাড়াও, ৩টি নতুন ইপিজেড প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে যা ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রস্তুত হবে। তিনি চীনা বিনিয়োগকারীদের বেপজাধীন এই জোনসমূহে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
স্বাগত বক্তব্যে আয়োজক অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সদস্য লিনো বেপজার প্রতিনিধিদলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে তার ইতিবাচক ধারণা তুলে ধরেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুয়ানঝো মেরিটাইম সিল্ক রোড ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান মি. চ্যাংসং ছেন বাংলাদেশ-চীনের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য চীনা বিনিয়োগকারীদের আহবান জানান।
সন্ধ্যায় সিটি মেয়র কর্তৃক আয়োজিত নৈশভোজে বেপজা প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। উক্ত নৈশভোজে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী কিছু বিনিয়োগকারীও অংশগ্রহণ করেন যাদের সাথে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। নৈশভোজে চীনের ফুজিয়ান প্রদেশ ও বাংলাদেশের মধ্যে শ্রমিক-কর্মচারী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজনের বিষয়েও আলোচনা হয়। বিজ্ঞপ্তি