পাঁচ বছরে সোনার দাম দ্বিগুণ জুয়েলারি ব্যবসায় মন্দা

প্রকাশ | ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
দেশের বাজারে ছয় মাস ধরে সোনার ভরি লাখ টাকার ওপর। যদিও দামি এই ধাতু এখন আর লাখের ঘরে আটকে নেই, সোয়া লাখের দিকে ছুটছে। যেভাবে সোনার দাম বাড়ছে, এতে ক্রেতাদের একটি বড় অংশের কাছে সোনার অলংকার বানানো দুঃস্বপ্নের পর্যায়ে চলে গেছে। আর জুয়েলার্স ব্যবসায়ীদের বড় অংশই ব্যবসা টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জে আছেন। অবশ্য, যাদের ঘরে কিংবা লকারে সোনার পুরনো অলংকার রয়েছে, তারা আছেন সুবিধাজনক অবস্থায়। দেশে এখন ভালো মান অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের সোনার ভরি এক লাখ ১৮ হাজার ৭৯৮ টাকা। বাংলাদেশ যে বছর স্বাধীন হয়, এর আগের বছর এক ভরি সোনার দাম ছিল ১৫৪ টাকা। অর্থাৎ গত ৫৪ বছরে দাম বেড়েছে ৭৭১ গুণ। এত পেছনে না গিয়ে যদি সাম্প্রতিক সময়ের হিসাব করা হয়, তবু দেখা যায়, গত এক দশকে দাম বেড়েছে পৌনে তিন গুণ। আর পাঁচ বছরের ব্যবধানে পৌনে দুই গুণ বেড়েছে। একাধিক ব্যবসায়ী বলছেন, সোনার দামের উচ্চমূল্যের কারণে জুয়েলার্স শিল্প আগে থেকেই সংকটে ছিল। গত বছরের শেষের দিকে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়তে শুরু করলে সংকট আরও প্রকট হয়। সোনার অলংকারের বড় ক্রেতাগোষ্ঠী হচ্ছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণি। অথচ তাদের একটা বড় অংশের সামর্থ্যের বাইরে চলে গেছে সোনার দাম। এখন উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণি সোনার অলংকারের মূল ক্রেতা। তাদের কারণে অভিজাত এলাকার জুয়েলার্সগুলো মোটামুটি ব্যবসা করলেও বাকিদের অবস্থা খারাপ। ব্যবসা কমে যাওয়ায় অলংকার তৈরির কারিগররাও পেশা বদল করছেন। বিশ্ববাজারের তুলনায় বাংলাদেশের সোনার বাজার ছোট। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে বার্ষিক সোনার চাহিদা ২০-৪০ টন। এর মধ্যে ১০ শতাংশ পুরনো অলংকার থেকে পূরণ হয়। বাকিটা ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে আসে। অবৈধভাবেও প্রচুর সোনা দেশে আসে। জুয়েলারি ব্যবসায় স্বচ্ছতা ফেরাতে সোনা আমদানির লাইসেন্স দেওয়া হয়। শুরুতে কিছু আমদানি করা হলেও নানা জটিলতায় পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। জানতে চাইলে জুয়েলার্স সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, সোনার দাম যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, এতে সৌন্দর্যচর্চার পরিবর্তে সম্পদচর্চায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে উচ্চবিত্তরাই সোনার অলংকারের মূল ক্রেতা। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে দাম। সে কারণে বিক্রিবাট্টাও অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। এদিকে, সোনার দাম অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ায় নতুন অলংকার বেচাকেনাও ধারাবাহিকভাবে কমে গেছে। এর প্রভাবে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে স্বর্ণশিল্পীদের সংখ্যাও দিন দিন কমছে। গত দুই দশকের ব্যবধানে স্বর্ণশিল্পীদের সংখ্যা চার ভাগের এক ভাগে নেমেছে বলে দাবি করেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, করোনার পর জুয়েলারি শিল্প জোড়া ধাক্কা খেয়েছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সোনার দাম এক দফা বেড়েছে। এরপর যুদ্ধের কারণে সেটি নাগালের বাইরে চলে গেছে। অলংকার নিকেতনের স্বত্বাধিকারী এমএ হান্নান আজাদ বলেন, 'সোনার দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পর বেচাবিক্রি খুবই খারাপ। জুয়েলারি ব্যবসা জীবনে এত খারাপ দেখিনি।' গত তিন বছরে সোনার অলংকার বিক্রিই ৪০-৪৫ শতাংশ কমেছে বলে জানালেন জুয়েলার্স সমিতির সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, কয়েক বছর আগেও মানুষ বিয়েশাদি কিংবা জন্মদিনের উপহার হিসেবে সোনার আংটি, কানের দুল কিংবা চেইন দিতেন। এখন সোনার বদলে নগদ অর্থ দেন অনেকে।