পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। দরপতনে সূচক তিন বছর আগের অবস্থানে নেমে এসেছে। হতাশ বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেই। নিরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে তারা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২১ সালের ১১ মে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক-এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ছিল পাঁচ হাজার ৭২৪ পয়েন্টে। সর্বশেষ গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার আবারও ডিএসইর প্রধান সূচক নেমে গেছে পাঁচ হাজার ৬৮৬ পয়েন্টে। অর্থাৎ ডিএসইর সূচক ফিরে গেল দুই বছর ১১ মাসের আগের অবস্থানে। যদিও এই সময়ের মধ্যে শেয়ারবাজারে যুক্ত হয়েছে নতুন ২২টি কোম্পানির শেয়ার।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, গত তিন বছরে অভিহিত মূল্যে ১৩টি এবং বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে ৯টি কোম্পানির আইপিওর শেয়ার সূচকে যুক্ত হয়েছে। এসব কোম্পানির শেয়ার সূচক থেকে বাদ দিলে ডিএসইর সূচক পাঁচ হাজারের নিচে নেমে যাবে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুই দিন বিরতি দিয়ে গত বৃহস্পতিবারও শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন হয়েছে। ওইদিন ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৭৭ পয়েন্টের বেশি। এর আগে গত সোমবার ডিএসইর সূচক কমেছিল ৯০ পয়েন্ট। গত দুই কর্মদিবসে কমেছে যথাক্রমে ৪ পয়েন্ট ও ১১ পয়েন্ট।
বিগত সপ্তাহে ঈদুল ফিতরের ছুটির কারণে একদিন কম লেনদেন হয়। অর্থাৎ চার কর্মদিবস লেনদেন হয়। ১৫-১৮ এপ্রিল এই চার কর্মদিবসে ডিএসইর সূচক ১৮২ পয়েন্ট কমেছে। এই চার কর্মদিবসে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৪১২টি প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে ৮৯টির দর বেড়েছে, ২৮৫টির দর কমেছে, ২১টির দর অপরিবর্তিত ছিল এবং ১৭টির লেনদেন হয়নি।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সোমবার ইসরাইলে ইরানের রকেট হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের অন্যান্য শেয়ারবাজারের মতো বাংলাদেশের শেয়ারবাজারেও বড় পতন হয়েছে। কিন্তু পরের দিন থেকে বিশ্বের শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের শেয়ারবাজার পতনের বৃত্তেই আটকে আছে। যেভাবে পতন হয়েছে, এর কোনো কারণ বাজার সংশ্লিষ্টরা খুঁজে পাচ্ছেন না। তারা বলছেন, বড় বিনিয়োগকারীরা কম দামে শেয়ার হাতিয়ে নেয়ার জন্যই এখন পতন ঘটাচ্ছেন।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে চার কার্যদিবসে মোট বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট এক হাজার ৯১২ কোটি ৮১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে পাঁচ কার্যদিবসে মোট দুই হাজার ১৭৪ কোটি ২০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ২৬১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
এই চার কর্মদিবসে ডিএসইতে লেনদেনের নেতৃত্বে উঠে এসেছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ২৩ কোটি ৪৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৪.৯১ শতাংশ।
লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তাওফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসি। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ২১ কোটি সাত লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৪.৪১ শতাংশ।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ১৬ কোটি আট লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৩.৩৬ শতাংশ।
এছাড়া প্রতিদিন গড় লেনদেনে সাপ্তাহিক শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে বেস্ট হোল্ডিংসের ১৬ কোটি পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ফু-ওয়াং ফুডের ১৪ কোটি ৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ফু-ওয়াং সিরামিকের ১৩ কোটি ২৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা, গোল্ডেন সনের ১২ কোটি ২৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা, সেন্ট্রাল ফার্মার ১১ কোটি ৬৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা, শাইনপুকুর সিরামিকসের ১১ কোটি ২৩ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ১০ কোটি ৬৪ লাখ ১০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এশিয়াটিক ল্যাবরটরিজ লিমিটেডের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ১৮.১৪ শতাংশ।
সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে দেশবন্ধু পলিমারের ১৭.৯১ শতাংশ, এসইএমএল লেকচার ইকু্যইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ডের ১৭.৫৭ শতাংশ, আইসিবি এএমসিএল গোল্ডেন জুবলি মিউচুয়াল ফান্ডের ১৫.০০ শতাংশ, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের ১৪.৩৪ শতাংশ, সালভো কেমিক্যালের ১৪.৩৪ শতাংশ, ফু-ওয়াং ফুডের ১৩.৯৫ শতাংশ, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ১৩.৩৭ শতাংশ, লাভেলো আইসক্রিমের ১২.২৫ শতাংশ এবং বিডি থাই ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ১১.৬৭ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে।