সাপ্তাহিক শেয়ারবাজার
দুই মাস পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা মূলধন ফিরেছে ৬৭৯ কোটি টাকা
প্রকাশ | ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
টানা দুই মাস দরপতনের পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে দেশের পুঁজিবাজার। গত ফেব্রম্নয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মার্চের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত সাত সপ্তাহে অধিকাংশ কার্যদিবসেই পতন হয়েছে। প্রতি সপ্তাহশেষে বিনিয়োগকারীরা তাদের মূলধন হারিয়েছে। তবে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আলোচ্য সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের মূলধন ফিরেছে ৬৭৯ কোটি টাকা।
বাজার বিশ্লেষইে দেখা গেছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৬৭৯ কোটি টাকা বা ০.১০ শতাংশ। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৯০৮ কোটি টাকায়। আগের সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৭৯ হাজার ২২৯ কোটি টাকা।
আগের সপ্তাহের চেয়ে বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর সব কটি সূচকও বেড়েছে। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৭.৭৯ পয়েন্ট বা ০.৩১ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ১৬৩.৩৪ পয়েন্ট বা ২.৭৫ শতাংশ। এদিকে ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ১১.৮৭ পয়েন্ট বা ০.৯৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমেছিল ৩৮.৪৯ পয়েন্ট বা ২.৯৮ শতাংশ। আর ডিএসই-৩০ সূচক বেড়েছে ৩.৮৪ পয়েন্ট বা ০.১৯ শতাংশ। তবে আগের সপ্তাহে এটি কমেছিল ৪৬.৬৩ পয়েন্ট বা ২.২৭ শতাংশ।
সূচকের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার পাশাপাশি ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৯৭৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। লেনদেন বেড়েছে ১৯৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। তবে প্রতি কর্মদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১১.৯৬ শতাংশ বা ৫৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। চলতি সপ্তাহের প্রতি কর্মদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৩৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৪৯৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচু্যয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে বেড়েছে ১৮৮টি কোম্পানির, কমেছে ৩৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬৮টি কোম্পানির শেয়ারের দর।
অপর শেয়াবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সপ্তাহ ব্যবধানে প্রধান সূচক সিএএসপিআই সূচক ০.৩৬ শতাংশ ও সিএসসিএক্স সূচক ০.৪২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৬ হাজার ৬১৪.৪৬ পয়েন্ট ও ৯ হাজার ৯৯৩.৮৩ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসআই সূচক ০.৯৬ শতাংশ, সিএসই-৩০ সূচক ০.০৮ শতাংশ ও সিএসই-৫০ সূচক ০.৫৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৮৪.৯৩ পয়েন্টে, ১২ হাজার ৭১২.৯৪ পয়েন্টে ও ১ হাজার ১৮৯.১৪ পয়েন্টে। তবে সপ্তাহ ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ৪৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহে হয়েছিল ৯৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩১০টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচু্যয়াল ফান্ড ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৪টির, কমেছে ১৪৮টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২৮টি কোম্পানির শেয়ার দর।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনের নেতৃত্বে উঠে এসেছে শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ২৩ কোটি ৫৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৫.৪২ শতাংশ।
লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ২০ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৪.৭৬ শতাংশ।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ২০ কোটি ১১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৪.৬২ শতাংশ।
এছাড়া লেনদেনে সাপ্তাহিক শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে মালেক স্পিনিংয়ের ১৯ কোটি ৯২ লাখ ২০ হাজার টাকা, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের ১৫ কোটি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, লাভেলো আইসক্রিমের ১২ কোটি ৭৯ হাজার ৪০ টাকা, এমারেল্ড অয়েলের ১১ কোটি ৫৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ফু-ওয়াং সিরামিকের ১০ কোটি ৬০ লাখ ৩০ হাজার টাকা, গোল্ডেন সনের ৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ৯ কোটি ৪৩ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে ম্যাকসন্স স্পিনিং মিলস লিমিটেডের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ২৭.৬৮ শতাংশ।
সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে মেট্রো স্পিনিংয়ের ২১.১৪ শতাংশ, কেএন্ডকিউয়ের ১৪.৪২ শতাংশ, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ১৩.৫৯ শতাংশ, লাভেলো আইসক্রিমের ১২.২৪ শতাংশ, ড্রাগন সোয়েটারের ১২.১৭ শতাংশ, ইনটেক লিমিটেডের ১১.৯১ শতাংশ, কেডিএস এক্সেসরিজের ১১.৪৪ শতাংশ, কাট্টালী টেক্সটাইলের ১১.৩২ শতাংশ এবং ভিএফএস থ্রেড ডাইং লিমিটেডের ১০.৯৭ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে।
সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৬.৫১ শতাংশ কমেছে। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এই তথ্য জানা গেছে।
সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষ তালিকায় স্থান পাওয়া অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এমারেল্ড অয়েলের ১৫.৮৭ শতাংশ, আইবিবিএল মুদারাবা পারপেচু্যয়াল বন্ডের ১৫.৪৪ শতাংশ, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়ামের ১২.৩৬ শতাংশ, গোল্ডেন সনের ১২.১৬ শতাংশ, এশিয়াটিক ল্যাবরটরিজের ১০.৭৯ শতাংশ, সেন্ট্রাল ফার্মার ১০.১০ শতাংশ, গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের ৯.৮৪ শতাংশ, দেশবন্ধু পলিমারের ৯.২০ শতাংশ এবং একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেডের ৮.৮৬ শতাংশ শেয়ারদর কমেছে।