বিদায়ী সপ্তাহে অর্থাৎ ২৪ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত দেশের শেয়ারবাজারে অধিকাংশ কার্যদিবসে পতনের মধ্যদিয়ে লেনদেন হয়েছে। তবে সপ্তাহের শেষ সপ্তাহে সূচক সামান্য বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক কমেছে ১৬৩ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট। ফলে সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে আরও ১৩ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। অন্যদিকে দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই দৃশ্য দেখা গেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৩ হাজার ৩১১ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৯২ শতাংশ। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৯ হাজার ২২৯ কোটি টাকায়। আর গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯২ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা।
আগের সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে ডিএসইর সবগুলো সূচকও কমেছে। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৬৩ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ২৬ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ। এদিকে ডিএসইএস সূচক কমেছে ৩৮ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৬ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ। আর ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ৪৬ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৭ শতাংশ। তবে আগের সপ্তাহে এটি বেড়েছিল ৬ দশমিক ১৪ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ।
সূচকের এই নিম্নমুখী প্রবণতার পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৯৭৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৯৮৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। লেনদেন কমেছে ৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিদায়ী সপ্তাহের মঙ্গলবার দেশের শেয়ারবাজার বন্ধ ছিল। যে কারণে বিদায়ী সপ্তাহে চার কর্মদিবস লেনদেন হয়েছে।
এদিকে প্রতি কর্মদিবসে গড় লেনদেন কমেছে শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ বা ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। বিদায়ী সপ্তাহের প্রতি কর্মদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৯৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৪৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে ৩৯৩টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচু্যয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৫টির, কমেছে ৩৪৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫টির। সিএসইতে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান সূচক সিএএসপিআই সূচক ২.২৬ শতাংশ ও সিএসসিএক্স সূচক ২ দশমিক ১৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৬ হাজার ৫৫৩ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট ও ৯ হাজার ৯৫১ দশমিক ৪৩ পয়েন্টে।
এছাড়া সিএসআই সূচক ১ দশমিক ৮৪ শতাংশ, সিএসই-৩০ সূচক শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ ও সিএসই-৫০ সূচক ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৭৪ দশমিক ৫৮ পয়েন্টে, ১২ হাজার ৭০১ দশমিক ৮২ পয়েন্টে ও এক হাজার ১৮২ দশমিক ২৬ পয়েন্টে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৩১ কোটি ১৬ লাখ টাকা। সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হয়েছে ৯৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহে হয়েছিল ৬৬ কোটি ১ লাখ টাকা।
সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩১২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচু্যয়াল ফান্ড ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যার মধ্যে দাম বেড়েছে ৪৮টির, কমেছে ২৪৩টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টির।
বিগত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনের নেতৃত্বে উঠে এসেছে এশিয়াটিক ল্যাবরটরিজ লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ২৮ কোটি ৩২ লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ২৪ কোটি ৩৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ১৯ কোটি ৯৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৪ দশমিক ০৪ শতাংশ।
এছাড়া প্রতিদিন গড় লেনদেনে সাপ্তাহিক শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেস্ট হোল্ডিংসের ১৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, গোল্ডেন সনের ১৫ কোটি ৯২ লাখ ২০ হাজার টাকা, ফু-ওয়াং সিরামিকের ১৫ কোটি ১০ হাজার টাকা, শাইনপুকুর সিরামিকসের ১২ কোটি ২৩ লাখ ১০ হাজার টাকা, মালেক স্পিনিংয়ের ১০ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ফরচুন সুজের ১০ কোটি ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ১০ কোটি ২ লাখ ৮০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে সিটি জেনারেল ইন্সুরেন্সের ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট অগ্রণী ব্যাংক মিউচু্যয়াল ফান্ডের ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের ৬ দশমিক ৬৪, সিটি ব্যাংকের ৫ দশমিক ১৪, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ৪ দশমিক ১৯, আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ফার্স্ট মিউচু্যয়াল ফান্ডের ৪ দশমিক ১৭, সেন্ট্রাল ফার্মার ৩ দশমিক ৮৫, রূপালী লাইফ ইন্সু্যরেন্সের ৩ দশমিক ৭৬ এবং আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে।