পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে বেড়েছে ডিমের
ভারতের পেঁয়াজ না এলেও বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। এতেই ধারাবাহিকভাবে কমছে পেঁয়াজের দাম। কিছুদিন আগে যে পেঁয়াজের কেজি ১৩০-১৪০ টাকা ছিল, এখন সেই পেঁয়াজ কোনো কোনো ব্যবসায়ী ৫৫ টাকায় বিক্রি করছেন
প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে। বিপরীতে নতুন করে বেড়েছে ডিমের দাম। কেজিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে ৫ টাকা। আর ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকার মতো বেড়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর রামপুরা, খিলগাঁও, মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, কমলাপুরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে। বিপরীতে ডিমের চাহিদা দাম বাড়তির দিকে।
গত আগস্টে ভারতের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে সরকার ৪০ শতাংশ শুল্কারোপ করে। এরপর গত অক্টোবরে পেঁয়াজের সর্বনিম্ন রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা হয় টনপ্রতি ৮০০ মার্কিন ডলার। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে এসব পদক্ষেপ খুব বেশি কার্যকর না হওয়ায় গত ৭ ডিসেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার।
চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্য-বিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয়। ভারতের এই নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশের বাজারে হু হু করে বাড়ে পেঁয়াজের দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম ওঠে ১৪০ টাকা পর্যন্ত।
এমন পরিস্থিতিতে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানান, বাংলাদেশকে ভারত ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ দেবে। রোজার শুরুতেই ভারতীয় পেঁয়াজ বাংলাদেশে চলে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তবে এক এক করে ১৫ রোজা চলে গেলেও ভারতের পেঁয়াজ এখনো বাংলাদেশের বাজারে আসেনি।
অবশ্য, ভারতের পেঁয়াজ না এলেও বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। এতেই ধারাবাহিকভাবে কমছে পেঁয়াজের দাম। কিছুদিন আগে যে পেঁয়াজের কেজি ১৩০-১৪০ টাকা ছিল, এখন সেই পেঁয়াজ কোনো কোনো ব্যবসায়ী ৫৫ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছেন ৬০ টাকা।
পেঁয়াজের দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, 'বাজারের আচরণ বোঝা খুব কঠিন। সোমবার আড়ত থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনে এনেছি। মঙ্গলবারই সেই পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা বিক্রি করছি। কিছু করার নেই। হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম কমে গেছে।'
তিনি বলেন, 'কিছুদিন আগে পেঁয়াজের কেছি ১৪০ টাকা ছিল। কয়েক দফা দাম কমায় গত শুক্রবার পেঁয়াজের কেজি ৬৫-৭০ টাকা বিক্রি করেছি। এখন ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দাম কমলেও এখনকার পেঁয়াজের মান আগের পেঁয়াজের থেকে ভালো। বাজারে ভালো মানের পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে, এ কারণে দাম কমছে। তবে বাজারে এখন ভারতীয় কোনো পেঁয়াজ নেই। যদি ভারতের পেঁয়াজ বাজারে চলে আসে তাহলে দাম আরও কমতে পারে।'
রামপুরার ভ্যানে ৫৫ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করা মো. শাহ আলম বলেন, 'আমরা লাভ কম করে বেশি বিক্রির চেষ্টা করি। বাজারে এখন পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা, আমরা ৫৫ টাকা বিক্রি করছি। আড়তে পেঁয়াজের দাম কমেছে। এ কারণে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারছি। যদি আড়তে আরও দাম কমে, তাহলে সামনে আরও কম দামে বিক্রি করব। সোমবার পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা বিক্রি করেছি, মঙ্গলবার ৫৫ টাকা বিক্রি করছি। কারণ, কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পেরেছি।'
তিনি বলেন, 'আমি প্রতিদিন ৪-৫ মন পেঁয়াজ নিয়ে আসি। বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্যানে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করি। প্রতিদিন যে পেঁয়াজ নিয়ে আসি তার প্রায় সব বিক্রি হয়ে যায়। যেদিন আড়ত থেকে কম দামে কিনি, সেদিন কম দামে বিক্রি করি। আর আড়তে দাম বেশি দিয়ে কিনতে হলে, তখন দাম বাড়িয়ে দেয়। সীমিত লাভে বিক্রি করে দেয়।
এদিকে কিছুদিন আগে ১৪০ টাকা ডজন বিক্রি হওয়া ডিমের দাম মাঝে ১১০-১২০ টাকায় চলে আসে। গত শুক্রবারও এক ডজন ডিম ১২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। তবে গত দুই দিনে ডিমের দাম নতুন করে বেড়েছে। এতে এখন এক ডজন ডিম ১২৫-১৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
খিলগাঁওয়ে ১৩০ টাকা ডজন ডিম বিক্রি করা শাহিন আলম বলেন, রোজা শুরু হওয়ার আগে ডিমের ডজন ১৪০ টাকা ছিল। রোজার ভেতর ডিমের চাহিদা কমে যাওয়ায় ডজন ১২০ টাকায় চলে আসে। তবে দুই দিন ধরে বাড়ছে ডিমের দাম। এখন এক ডজন ডিম ১৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দাম কমায় ডিমের বিক্রি বেড়ে যায়, সে কারণেই হয়ত এখন আবার দাম বাড়ছে।
মালিবাগের ব্যবসায়ী মো. মিলন বলেন, ডিম গরম খাবার, এ কারণে রোজায় অনেকেই ডিম কম খায়। এ কারণে রোজার শুরুতে ডিমের চাহিদা অনেক কমে যায়। ফলে দামও কমে। দাম কমার পর আবার ডিমের চাহিদা বেড়ে যায়। আর চাহিদা বাড়ার কারণে এখন আবার দাম বাড়তে দেখা যাচ্ছে। এখন কিছুটা দাম বাড়লেও রোজার ভেতরে ডিমের দাম খুব বেশি বাড়ার সম্ভাবনা কম।
এদিকে, সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা বেগুন ৪০-৫০ টাকা কেজি, শিম ৩০-৪০ টাকা, বরবটি ৭০-৮০ টাকা, সজনে ডাটা ৩০০-৩২০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০-৪০ টাকা, করলা ৫০-৬০ টাকা, টমেটো ৩০-৫০ টাকা, গাজর ৪০-৫০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা। কাঁচামরিচের পোঁয়া বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা। ডাটার আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা। কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা কেজি।
ব্রয়লার মুরগি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকায়। পাকিস্তানি কক বা সোনালী মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০-৩৪০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে লাল লেয়ার মুরগি।